কেন্দ্র সরকার আয়কর বিল, ২০২৫ (Income-Tax Bill 2025) প্রত্যাহার করেছে, যা চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় উপস্থাপিত হয়েছিল আয়কর আইন, ১৯৬১ (Income-Tax Act, 1961) প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে। সরকার জানিয়েছে, আগামী সোমবার, ১১ আগস্ট, সংশোধিত খসড়া বিল লোকসভায় পেশ করা হবে।
নতুন খসড়া সংস্করণে সংসদের সিলেক্ট কমিটি (Parliamentary Select Committee) কর্তৃক প্রস্তাবিত ২৮৫টি সুপারিশের অধিকাংশই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই কমিটি গত ২১ জুলাই তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। মূলত আইনের ভাষা সহজ ও স্পষ্ট করা, অপ্রয়োজনীয় বা পুরনো বিধান বাদ দেওয়া এবং কিছু কারিগরি সংশোধন করাই পরিবর্তনের প্রধান লক্ষ্য। এর পাশাপাশি অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তনগুলির বড় অংশই ড্রাফটিং, বাক্য গঠন, ধারা রেফারেন্স এবং প্রযুক্তিগত সমন্বয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।
কমিটির প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন:
১. আয়কর ফেরত (Tax Refunds):
আগের খসড়ায় (ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সংস্করণ) একটি বিধান ছিল যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিল না করলে কোনও রিফান্ড পাওয়া যাবে না (ধারা ৪৩৩)। নতুন খসড়ায় এই শর্ত সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, করদাতা সময়সীমা পেরিয়েও রিটার্ন জমা দিলে রিফান্ড দাবি করতে পারবেন।
২. আন্তঃসংস্থার লভ্যাংশে ছাড় (Inter-corporate dividends):
ধারা ৮০এম (Clause 148) পুনর্বহাল করা হয়েছে, যা এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানি লভ্যাংশ পেলে কর ছাড় দেয়, এমনকি তারা বিশেষ করহার (Section 115BAA) অনুসারে কর দিলে ও। আগের খসড়ায় এই বিধান অনুপস্থিত ছিল।
৩. নিল টিডিএস সার্টিফিকেট (Nil TDS Certificate):
করদাতারা নির্দিষ্ট শর্তে নিল টিডিএস সার্টিফিকেট পেতে পারবেন, যার ফলে উৎসে কর কর্তন (Tax Deduction at Source) হবে না।
৪. বেনামী অনুদানে ছাড় (Exemption on Anonymous Donations):
শুধুমাত্র ধর্মীয় ট্রাস্টে প্রাপ্ত বেনামী অনুদান করমুক্ত থাকবে। তবে যে ট্রাস্ট ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি হাসপাতাল বা স্কুলের মতো সামাজিক পরিষেবা চালায়, তারা এই ছাড় পাবে না।
৫. ডিজিটাল-ফার্স্ট কর প্রক্রিয়া (Digital-first Tax Process):
পুরো কর প্রক্রিয়াকে আরও ডিজিটাল, স্বয়ংক্রিয় ও ফেসলেস করা হবে, যাতে করদাতার সুবিধা বাড়ে এবং দুর্নীতির সম্ভাবনা কমে।
পুঁজি লাভ কর (Capital Gains Tax) সংক্রান্ত গুঞ্জনে পরিষ্কার বার্তা:
সম্প্রতি খবর ছড়িয়েছিল যে নতুন আয়কর বিল পুঁজি লাভ করের হার পরিবর্তন করতে পারে। এ বিষয়ে আয়কর বিভাগ ‘এক্স’ (X)-এ স্পষ্ট করে জানায়, নতুন বিলে মূল উদ্দেশ্য হলো ভাষাগত সরলীকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় ধারাগুলি বাদ দেওয়া, করের হার পরিবর্তন নয়।
বিশেষজ্ঞের মতামত:
ট্যাক্স কানেক্ট অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস এলএলপি-র পার্টনার বিবেক Jalan বলেন—
“ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খসড়া বিলে ধারা ২৬৩(১)(এ)(ix)-এ বলা হয়েছিল, অধ্যায় XX-এর অধীনে রিফান্ড পেতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এতে অনেক করদাতার অসুবিধা হত, যারা বৈধ কারণে সময়সীমা মিস করতেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ধারা বাদ দেওয়ার মাধ্যমে, যাতে অপ্রয়োজনীয় মামলার ঝুঁকি কমে। নতুন খসড়ায় এই ধারা সরানো হবে এবং পরবর্তী ধারাগুলির নম্বর সমন্বয় করা হবে।”
আয়কর আইন, ১৯৬১-র প্রেক্ষাপট:
১৯৬১ সালের আয়কর আইন ১৯৬২ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয় এবং গত ছয় দশকে এটি ৬৫ বার সংশোধিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪,০০০-র বেশি পরিবর্তন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আইন জটিল হয়ে উঠেছে এবং বহু বিধান বাস্তবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। নতুন আয়কর বিলের মাধ্যমে পুরো আইনটিকেই প্রতিস্থাপন করে একে আরও সহজ, স্বচ্ছ ও ব্যবহারবান্ধব করার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র।
আগামী পদক্ষেপ:
১১ আগস্ট লোকসভায় নতুন বিল পেশ হলে করদাতা, করপোরেট সংস্থা এবং কর বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দেবে। সরকার আশা করছে, নতুন আইন কার্যকর হলে কর প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সরল হবে, করদাতাদের সঙ্গত সমস্যার সমাধান হবে এবং কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা বাড়বে।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এখনও কার্যকর হওয়ার সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আইন পাস হওয়ার পর অন্তত কয়েক মাসের মধ্যে এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। এ সময়কালে করদাতা ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুন বিধান অনুযায়ী নিজস্ব প্রক্রিয়া সাজিয়ে নিতে হবে।
সব মিলিয়ে, এই নতুন আয়কর বিল শুধু পুরনো আইনকে প্রতিস্থাপনই করবে না, বরং ভারতীয় কর ব্যবস্থায় একটি বড় সংস্কারের পথ খুলে দিতে পারে।