কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির প্রত্যাশায় দীর্ঘ ১০ বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে অষ্টম বেতন কমিশন (8th Pay Commission) গঠনের ঘোষণা এসেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুমোদনের পর এই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক অফিসাররা এই নতুন কমিশনের মাধ্যমে তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির আশা করছেন। তাঁদের দাবি, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংশোধন করা হোক।
Read Hindi: ‘हमने 10 साल इंतजार किया’: रिटायर्ड ऑफिसर्स की नई वेतन आयोग से उम्मीदें
২০১৬ সালে সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হওয়ার পর থেকে কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা অষ্টম কমিশনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই কমিশন প্রায় ৫০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারী এবং ৬৫ লক্ষ পেনশনভোগীকে উপকৃত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসাররা বিশেষভাবে আশা করছেন যে নতুন কমিশন তাঁদের পেনশন এবং পোস্ট-রিটায়ারমেন্ট সুবিধাগুলির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনবে। একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার, মেজর জেনারেল (অব.) সুশীল শর্মা বলেন, “আমরা ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু আমাদের পেনশন ততটা বাড়েনি। আমরা আশা করছি নতুন কমিশন আমাদের সমস্যার সমাধান করবে।”
অষ্টম বেতন কমিশনের ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৮৬ হতে পারে বলে জল্পনা চলছে। এই ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে, ন্যূনতম মাসিক বেতন ১৮,০০০ টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৫১,৪৮০ টাকা হতে পারে। পেনশনভোগীদের জন্যও পেনশন এবং মহার্ঘ ভাতা (ডিআর) বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা জানিয়েছেন, সপ্তম কমিশনের সময় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বেসামরিক কর্মচারীদের বেতন ও ভাতার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়েছিল, যা তাঁদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছিল। তাঁরা আশা করছেন, নতুন কমিশন এই বৈষম্য দূর করবে এবং সামরিক ও বেসামরিক অফিসারদের জন্য ন্যায্য বেতন কাঠামো তৈরি করবে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং কর্মচারী সংগঠনগুলি এই কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে তাঁরা দ্রুত কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ এবং কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সি. শ্রীকুমার বলেন, “একটি বেতন কমিশনের রিপোর্ট জমা দিতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগে। তাই দ্রুত কাজ শুরু না হলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এটি কার্যকর করা কঠিন হবে।” তিনি আরও বলেন, “লিভিং ওয়েজ এবং লিভিং পেনশনের ধারণা পরিষ্কার করা উচিত।”
২০২৫ সালের বাজেটে অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য কোনও তহবিল বরাদ্দ না হওয়ায় কিছু অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, এই কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হতে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ডি.কে. শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, বেতন ও পেনশন বৃদ্ধির ফলে সরকারের রাজস্ব ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। তবে এটি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, কারণ কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের ব্যয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা এই কমিশনের মাধ্যমে গ্র্যাচুইটি সীমা বৃদ্ধি, পেনশন স্কিমের সংস্কার এবং অবসরোত্তর সুবিধার উন্নতি আশা করছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনী অফিসার, ক্যাপ্টেন (অব.) রমেশ কুমার বলেন, “আমাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আর্থিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই কমিশন আমাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করুক।” সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মরত সামরিক কর্মীদের জন্য বিশেষ ভাতা এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বৃদ্ধির দাবিও উঠেছে।
অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে রাজ্য সরকারগুলি তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী এটি গ্রহণ করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা আশা করছেন, এই কমিশন তাঁদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে এবং তাঁদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।