Reliance investment in Bihar: ভোটের দামামা বেজে উঠেছে বিহারে। রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আবহে একের পর এক রাজনৈতিক ঘোষণা ও কৌশল নিয়েই ব্যস্ত রাজনৈতিক মহল। এর মধ্যেই রাজ্যের শিল্পোন্নয়নের ইতিহাসে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে উঠে এসেছে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর নতুন বিনিয়োগের খবর। মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন ক্যাম্পা কোলা সংস্থা ঘোষণা করেছে, তারা বিহারের বেগুসরাই জেলায় তাদের প্রথম উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলবে। প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার এই বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই আলোড়ন ফেলেছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলে।
বিহার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (BIADA) সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পা কোলার নতুন এই কারখানাটি ৩৫ একর জমির উপর তৈরি হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্প অনুমোদন কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। রাজ্যের শিল্প দফতরও নিশ্চিত করেছে যে, বেগুসরাইয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।
এই বিনিয়োগ বিহারের শিল্পায়নের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হিসেবে ধরা হচ্ছে। কারণ বেগুসরাই ইতিমধ্যেই একটি সফট ড্রিঙ্ক প্রস্তুতকারী সংস্থার কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ফলে ক্যাম্পা কোলার এই উদ্যোগ ওই অঞ্চলে আরও শিল্পসংস্থার আগমন ও সহায়ক শিল্পের প্রসারে সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে, বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
BIADA-এর একই বৈঠকে মুজাফফরপুরে একটি পশুখাদ্য উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় ২০ কোটি টাকার বিনিয়োগে এই ইউনিট তৈরি হবে। যদিও অন্য কয়েকটি প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছে, তবে তুলনামূলকভাবে সেগুলির বিনিয়োগের পরিমাণ কম।
গত কয়েক বছরে বিহারে বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির বিনিয়োগের প্রবণতা বাড়ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছর আদানি গোষ্ঠী নবাদা জেলার বারসালীগঞ্জে একটি পরিত্যক্ত চিনি কারখানার স্থানে সিমেন্ট কারখানা তৈরির ঘোষণা করেছিল। এছাড়াও, একাধিক আইটি সংস্থা বিহারে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে, যার ফলে রাজ্যের শিল্পভিত্তি আরও বিস্তৃত হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাম্পা কোলার এই বিনিয়োগ শুধু বেগুসরাই নয়, গোটা বিহারের শিল্প সম্ভাবনার জন্য এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে। রাজ্যের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বিহারে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সরকার যেভাবে কাজ করছে, এই বিনিয়োগ তারই ফল। ক্যাম্পা কোলার মতো সংস্থা বিহারকে তাদের শিল্প গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে আমাদের সাফল্য।”
অন্যদিকে, এই বিনিয়োগ ঘোষণাকে ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ভোটের মুখে এই ধরনের বড় বিনিয়োগ ঘোষণা রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক ভাবমূর্তি তুলে ধরার কৌশলের অংশ। যদিও সরকার পক্ষ বলছে, এই উদ্যোগ কেবল ভোটকেন্দ্রিক নয়, বরং বিহারকে দেশের শিল্প মানচিত্রে তুলে ধরার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
সব মিলিয়ে, ভোটের আবহে রিলায়েন্সের এই বিপুল বিনিয়োগ বিহারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হয়ে উঠেছে। এখন দেখার, এই ঘোষণাগুলি বাস্তবায়নের পথে কতটা দ্রুত অগ্রসর হয় এবং বিহারবাসী এর কতটা সুফল পান।