মুকেশ আম্বানি নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (RIL) বৃহস্পতিবার তাদের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) শুরু করল এক বিশেষ ঘোষণার মাধ্যমে। সভার মূল কেন্দ্রে ছিল ডিজিটাল ও এনার্জি ব্যবসার দ্রুত সম্প্রসারণ পরিকল্পনা। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে বড় খবর হলো— রিলায়েন্স জিও আগামী ২০২৬ সালের প্রথমার্ধেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চলেছে। বহু প্রতীক্ষিত এই ঘোষণা ভারতের পুঁজিবাজারে অন্যতম ঐতিহাসিক আইপিও হিসেবে বিবেচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সভায় রিলায়েন্সের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি জানান, “জিও ইতিমধ্যেই ৫০ কোটিরও বেশি গ্রাহক অর্জন করেছে। শুধু ভারতের নয়, এটি এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। এ কারণেই জিও শেয়ারবাজারে প্রবেশের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জিওকে তালিকাভুক্ত করা, অবশ্যই প্রয়োজনীয় সব অনুমোদন পাওয়ার শর্তে। আমি আশ্বস্ত করছি, এই আইপিও দেখিয়ে দেবে যে জিওও বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো বিশাল মূল্য তৈরি করতে সক্ষম। এটি সব বিনিয়োগকারীদের জন্য এক অসাধারণ সুযোগ হবে।”
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইপিও হবে ভারতের ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম। খুচরা বিনিয়োগকারীদের জন্যও জিও-র শেয়ার প্রথমবার সরাসরি কেনার সুযোগ তৈরি হবে।
জিও আইপিও ছাড়াও মুকেশ আম্বানি এজিএম-এ রিলায়েন্সের আগামীর নকশা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (AI) আখ্যা দেন “আমাদের যুগের কামধেনু” হিসেবে। তাঁর বক্তব্যে এআই-কে শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং উৎপাদনশীলতা ও উদ্ভাবনের নতুন ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হয়েছে।
আম্বানি বলেন, “রিলায়েন্স কেবলমাত্র রিটেল, টেলিকম বা এনার্জি নয়—আমরা প্রতিটি ব্যবসায় এআইকে অন্তর্ভুক্ত করছি। পাশাপাশি, আমরা ভারতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক পরিচ্ছন্ন শক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করছি। ডিজিটাল হেলথ, জেনোমিক্স ও লাইফ সায়েন্সেও আমাদের বিনিয়োগ বাড়ছে।”
তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন, ভারতের বিশাল জনসংখ্যা, প্রতিভা ও উদ্যোগী মানসিকতা দেশটিকে এই নতুন যুগের বৈশ্বিক নেতৃত্বে পৌঁছে দেবে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ FY25 অর্থবছরে ভারতের প্রথম সংস্থা হিসেবে ১২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১০.৭১ লক্ষ কোটি টাকা বার্ষিক আয় অতিক্রম করেছে। এজিএমে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী—
কনসোলিডেটেড রাজস্ব: ১০.৭১ লক্ষ কোটি টাকা
ইবিটিডা (EBITDA): ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা
নিট মুনাফা: ৮১,৩০৯ কোটি টাকা
শুধু তাই নয়, রিলায়েন্স কেন্দ্রীয় কোষাগারে ২.১০ লক্ষ কোটি টাকা কর ও শুল্ক জমা দিয়েছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে।
মুকেশ আম্বানি তাঁর বক্তৃতায় কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। বর্তমানে রিলায়েন্স গ্রুপে কর্মরত আছেন প্রায় ৬.৮ লক্ষ কর্মী। আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা বেড়ে ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান। ফলে শুধু ব্যবসা নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও রিলায়েন্স দেশের অন্যতম প্রধান অবদানকারী হিসেবে থাকছে।
আম্বানি বলেন, “বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে, কিন্তু একইসঙ্গে আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যা ‘প্রাচুর্য ও সাশ্রয়ের সোনালি যুগ’। প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন শক্তি, জেনোমিক্স, এআই ও ডিপ টেক—সব একসঙ্গে মিলিত হয়ে মানবজাতির জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রিলায়েন্স কেবল এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই নয়, বরং ভারতের উন্নয়ন মডেলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অবস্থানে পৌঁছেছে।
এজিএম শেষ হওয়ার পর বাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল জিওর আসন্ন তালিকাভুক্তি। আগামী এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজার বিশেষজ্ঞ, বিশ্লেষক এবং খুচরা বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে এই প্রক্রিয়ার দিকে। কারণ, জিওর আইপিও শুধু রিলায়েন্স বা বিনিয়োগকারীদের জন্য নয়, ভারতের সামগ্রিক পুঁজিবাজারের ইতিহাসেও এক নতুন অধ্যায় লিখতে চলেছে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ সবসময়ই ভারতের অর্থনীতিতে পথপ্রদর্শক সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে। ২০২৬ সালে জিওর আইপিও সেই যাত্রায় এক নতুন মাইলফলক হতে চলেছে। ডিজিটাল পরিষেবা থেকে পরিচ্ছন্ন শক্তি, এআই থেকে জেনোমিক্স—রিলায়েন্সের বহুমুখী ভিশন আগামী দিনের ভারতের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে।