রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী বদল, কেন্দ্র চায় জনগণের মত

দেশজুড়ে অচলায়তন কাগজ-নির্ভর দলিল নিবন্ধন প্রথার পরিবর্তে একটি আধুনিক, অনলাইন, এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকারের ভূমি সম্পদ দপ্তর একটি নতুন আইন…

Digital Land Registration india

দেশজুড়ে অচলায়তন কাগজ-নির্ভর দলিল নিবন্ধন প্রথার পরিবর্তে একটি আধুনিক, অনলাইন, এবং নাগরিক-কেন্দ্রিক নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকারের ভূমি সম্পদ দপ্তর একটি নতুন আইন খসড়া করেছে – ‘রেজিস্ট্রেশন বিল, ২০২৫’ (Registration Bill 2025)। এই বিলটি প্রণয়ন হলে, ব্রিটিশ আমলের ‘রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৯০৮’ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, প্রাক-বৈধতা পরামর্শ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এই খসড়া বিলটি ভূমি সম্পদ বিভাগের (Department of Land Resources) ওয়েবসাইটে (https://dolr.gov.in) আপলোড করা হয়েছে। জনসাধারণের কাছ থেকে নির্ধারিত ফরম্যাটে ৩০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৫ জুনের মধ্যে মতামত চাওয়া হয়েছে।

   

প্রায় ১১৭ বছর ধরে ভারতবর্ষে যে নিবন্ধন আইন কার্যকর রয়েছে, তা মূলত স্থাবর সম্পত্তি এবং অন্যান্য আর্থিক-আইনি লেনদেনের ক্ষেত্রে নথিভুক্তিকরণে আইনি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই আইনেই বহু গুরুত্বপূর্ণ দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে, যা আইনি, প্রশাসনিক এবং আর্থিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে আইনের আধুনিকায়ন অপরিহার্য
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজকের দিনে নিবন্ধিত দলিলের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে। ডিজিটাল পরিষেবা, সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এমন একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা আবশ্যক, যা আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং ভবিষ্যতমুখী।”

বর্তমানে দেশের অনেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ইতিমধ্যেই অনলাইন দলিল জমা দেওয়া, ডিজিটাল পরিচয় যাচাই-এর মতো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন কার্যকর করেছে বর্তমান ১৯০৮ সালের আইনের আওতায় থেকেই। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো রাজ্যভিত্তিক ও খণ্ডিত, ফলে একটি সর্বভারতীয় সমন্বিত আইনগত কাঠামো তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
খসড়া বিলের লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রযুক্তি-সমৃদ্ধি নয়, পাশাপাশি নিবন্ধন কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করাও। তাদের কাজের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও আইনি নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখতে এই বিল বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে।

Advertisements

এই আইনের অধীনে একটি নাগরিক-বান্ধব, নিরাপদ ও দক্ষ নিবন্ধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে যেখানে দলিল নথিভুক্তকরণ হবে অনলাইনে, কোনোপ্রকার অফিসে যাতায়াতের প্রয়োজন ছাড়াই। এতে সাধারণ মানুষের সময়, অর্থ এবং ভোগান্তি কমবে।

জনগণের মতামতের গুরুত্ব
কেন্দ্র সরকার চায়, দেশের নাগরিকরাই এই খসড়া আইন সম্পর্কে মতামত দিয়ে এটিকে আরও গণমুখী ও কার্যকর করুক। তাই উন্মুক্ত পরামর্শ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণ চাওয়া হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা https://dolr.gov.in-এ গিয়ে নির্ধারিত ফর্মে নিজের পরামর্শ পাঠাতে পারেন।

রেজিস্ট্রেশন বিল, ২০২৫-এর কিছু প্রস্তাবিত বৈশিষ্ট্য

  • সম্পূর্ণ অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
  • ই-সিগনেচার ও ডিজিটাল ভেরিফিকেশন
  • দলিল স্ক্যান ও সংরক্ষণের ডিজিটাল আর্কাইভিং ব্যবস্থা
  • নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা
  • নিবন্ধন অফিসারদের জন্য নির্ধারিত কার্যবিধি ও জবাবদিহিতা কাঠামো
  • আর্থিক ও আইনগত লেনদেনের জন্য আইনি প্রামাণ্য দলিল হিসাবে ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশনের স্বীকৃতি

সরকার মনে করে, এই আইন কার্যকর হলে দেশের দলিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। শহর ও গ্রাম নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিক একটি একক, আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর রেজিস্ট্রেশন পরিষেবা পাবে – যা হবে দ্রুত, স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত। এই বিলের ফলে রিয়েল এস্টেট, কৃষিজমি লেনদেন, ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত রেকর্ড সহ বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া আরও মসৃণ ও ডিজিটাল হবে।

দেশের নাগরিকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ – তারা চাইলেই এখন এই আইনের গঠনে অংশ নিতে পারেন এবং ভবিষ্যতের ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ভূমিকা রাখতে পারেন।