এই ক্যালেন্ডার বছরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট হারে রিপো রেট কমিয়েছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে গৃহঋণ ও পার্সোনাল ঋণের উপর, কারণ বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই সুদের হার কমিয়েছে। এখন অনেক ব্যাঙ্ক ৭.৪৫ শতাংশ বার্ষিক হারে গৃহঋণ দিচ্ছে, যা পূর্বের তুলনায় অনেকটাই কম। এতে স্বাভাবিকভাবেই কমেছে EMI (Equated Monthly Installment), বিশেষত যাঁদের ফ্লোটিং রেট ভিত্তিক ঋণ রয়েছে।
তবে সমস্যা একটাই—ব্যাঙ্ক ও ঋণদাতা সংস্থাগুলি অনেক সময়ই সুদের হার হ্রাসের পূর্ণ সুবিধা দ্রুত বা সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয় না। ফলে অনেক ঋণগ্রহীতা বুঝে উঠতে পারেন না, এখন কী করবেন—ঋণ রিফাইন্যান্স করবেন, প্রিপেমেন্ট করবেন, না কি বড় বাড়ি কেনার কথা ভাববেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি এবং তুলে ধরছি তিনটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ যেগুলি গৃহঋণগ্রহীতাদের জন্য কার্যকর হতে পারে।
রিফাইন্যান্সিং: EMI কমাতে বা মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করতে বড় সুযোগ:
Easiloan-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও প্রমোদ কাঠুরিয়া জানিয়েছেন, “বর্তমানে রিফাইন্যান্সিং-এর চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, কারণ এর মাধ্যমে বাস্তবেই অনেক অর্থ সাশ্রয় সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যক্তি ৯% হারে ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে থাকেন এবং ১৫ বছর বাকি থাকে, সেই ঋণ যদি ৮% হারে রিফাইন্যান্স করা যায়, তাহলে প্রায় ৪.৫ লক্ষ টাকা সুদের সাশ্রয় হবে।”
প্রসেসিং চার্জ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে চূড়ান্ত সাশ্রয় কিছুটা কম হলেও, রিফাইন্যান্স করলে একই EMI রেখে প্রায় ২ বছর আগে ঋণ শোধ করা সম্ভব। ফলে EMI কমানোর পাশাপাশি ঋণের চাপও অনেকটাই হ্রাস পায়।
প্রিপেমেন্ট: শুরুতেই আংশিক শোধে সাশ্রয় আরও বেশি:
ঋণের প্রথমদিকে যখন সুদের অনুপাত বেশি থাকে, তখন আংশিক প্রিপেমেন্ট করলে সবচেয়ে বেশি সাশ্রয় হয়। যেমন ধরুন, কেউ ২০ বছরের মেয়াদে ৯% হারে ৫০ লক্ষ টাকার ঋণ নিয়েছেন, এবং প্রথম বছরেই যদি তিনি ৫ লক্ষ টাকা প্রিপে করেন, তাহলে পুরো ঋণকালে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদের খরচ কমানো সম্ভব।
প্রিপেমেন্টে কোনও অতিরিক্ত চার্জ না থাকলে, এটি ঋণগ্রহীতার জন্য একটি লাভজনক সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটি EMI কম না করেও ঋণের সময়কাল কমিয়ে দেয়।
বড় বাড়ি কেনার পরিকল্পনা: সুযোগ আছে, তবে ভাবুন সাবধানে:
সুদের হার কমে যাওয়ায় অনেকেই ভাবেন আরও বড় বা উন্নত ফ্ল্যাট কিনে নেওয়ার কথা। কারণ কম সুদে বেশি টাকা ধার নেওয়া যায়। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতি বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, “হঠাৎ সুদের হার কমে যাওয়ায় বড় ঋণ নেওয়া যুক্তিযুক্ত নাও হতে পারে, যদি না আপনার ভবিষ্যতের আয় এবং খরচের হিসাব সেই বাড়তি EMI বহনে সক্ষম হয়।”
তবে একে বলে না একক সমাধান: নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নিন সেরা উপায়:
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনার লক্ষ্য কী, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি মাসিক EMI কমাতে চান, তাহলে রিফাইন্যান্সিং হতে পারে সেরা পছন্দ। যদি সুদের খরচ কমাতে চান, তাহলে প্রিপেমেন্ট একটি কার্যকর পথ। আর যদি আপনি বাড়ির আকার বা অবস্থান উন্নত করতে চান, তাহলে নতুন ঋণের কথা ভাবতে পারেন—তবে অবশ্যই ভবিষ্যতের আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে।
বিশেষজ্ঞদের মত, গৃহঋণ একটি দীর্ঘমেয়াদি দায়, ফলে সাময়িক হারে পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সামগ্রিক আর্থিক পরিকল্পনা বিবেচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সতর্কতামূলক পরামর্শ:
রিফাইন্যান্স করার আগে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও NBFC-র অফার তুলনা করুন
প্রসেসিং ফি, চেকিং চার্জ, এবং অন্যান্য লুকোনো খরচ ভালোভাবে যাচাই করুন
EMI কমিয়ে দিলে ঋণের সময়কাল বেড়ে যায়—সেটা আপনার পরিকল্পনার সঙ্গে মানানসই কিনা দেখুন
প্রিপেমেন্টে ব্যাঙ্ক কোনও চার্জ নিচ্ছে কিনা, জানুন
রিপো রেট কমার ফলে যাঁদের গৃহঋণ রয়েছে, তাঁদের জন্য এটা এক ‘সোনার সুযোগ’। তবে এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার নির্ভর করে আপনার বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের আর্থিক লক্ষ্যগুলির উপর। রিফাইন্যান্সিং, প্রিপেমেন্ট বা বড় বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একজন আর্থিক পরামর্শদাতার পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিলে আপনি ভবিষ্যতের আর্থিক বোঝা অনেকটাই হালকা করতে পারবেন।