ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এতদিন মেট্রো শহরগুলোকে কেন্দ্র করেই বিনিয়োগের মূল প্রবাহ চলত, কিন্তু বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা বহুলাংশে নজর দিচ্ছেন টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরের দিকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নত সংযোগ ব্যবস্থা, বাড়তে থাকা নগরায়ণ এবং সরকারি উদ্যোগ এই উদীয়মান শহরগুলোকে নতুন বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে।
বিনিয়োগকারীদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি:
RISE Infraventures-এর চিফ অপারেটিং অফিসার ভূপিন্দ্র সিংহ জানান, মেট্রো শহরের তুলনায় ছোট শহরগুলোতে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। তিনি বলেন, “টিয়ার-১ শহরের বিনিয়োগকারীরা বেশি রিটার্নের আশায় টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরে ঝুঁকছেন। অপরদিকে, টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরের বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীল আয়ের জন্য মেট্রো শহরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।”
ভূপিন্দ্র সিংহের মতে, এই প্রবণতা বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতাকেই প্রতিফলিত করে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “মেট্রো শহরগুলো সবসময় বিনিয়োগের মূল কেন্দ্র হিসেবেই থাকবে। কিন্তু ছোট শহরগুলোর বৃদ্ধি এখন অনস্বীকার্য।”
অবকাঠামো উন্নয়নে বাড়ছে আস্থা:
অবকাঠামোগত পরিবর্তনই মূলত টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরের রিয়েল এস্টেট বাজারে গতি এনেছে। সড়ক নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ, মেট্রো প্রকল্পের বিস্তার, বিমানবন্দর ও শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াচ্ছে। এর ফলে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় খাতেই বাড়ছে আগ্রহ।
ভূপিন্দ্র সিংহ আরও জানান, সরকারপন্থী নীতিমালা, অনুকূল সুদের হার এবং ইতিবাচক বাজার পরিস্থিতি আগামী ১০-১৫ বছর ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। সম্প্রতি RISE Infraventures লিজিং সেগমেন্টে প্রবেশ করেছে, যা UHNI (Ultra High Net-worth Individuals) এবং ফ্যামিলি অফিসগুলিকে প্রি-লিজড ও আয় উৎপাদনকারী সম্পদে বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে।
বাড়ছে আবাসন চাহিদা:
অর্থ মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৬ সালের মধ্যে ভারতে আবাসন চাহিদা প্রায় ৯৩ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছাবে। এই বিশাল চাহিদা বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করছে। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে আবাসিক বিক্রি ও অফিস স্পেসের চাহিদা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
বিনিয়োগ প্রবাহে পরিবর্তন:
Colliers-CREDAI-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে গত ১৫ বছরে ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতে প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এসেছে। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশই এসেছে বিদেশি মূলধন থেকে। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে দেশীয় মূলধনও শক্তিশালী ভূমিকা নিতে শুরু করেছে, যা বিনিয়োগের ধরনে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অর্থনীতিতে অবদান:
একসময় খণ্ডিত ও অনিয়ন্ত্রিত খাত হিসেবে পরিচিত রিয়েল এস্টেট সেক্টর আজ ভারতের অন্যতম স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল শিল্পে পরিণত হয়েছে। ২০১০ সালের আগে যেখানে জিডিপিতে এই খাতের অবদান ছিল ৫ শতাংশেরও কম, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬-৮ শতাংশে। ২০২৫ সালে একাই এই খাত ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ০.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সংযোজন করেছে।
শেষ কথা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের রিয়েল এস্টেট খাত আগামী দশকে দেশের অন্যতম বৃদ্ধিচালক হিসেবে উঠে আসবে। বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারি নীতি এবং বাড়তে থাকা নগরায়ণ—সব মিলিয়ে টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহরগুলো আগামী দিনের বিনিয়োগ মানচিত্রে বিশেষ স্থান করে নেবে।