RBI old notes recycling: টাকায় কি ফার্নিচার তৈরি হতে পারে? অবাক হলেও সত্যি, এমন এক অভিনব প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI)। পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত ও অচল নোটের সঠিক পুনর্ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব কণিকা বোর্ড (Particle Board) তৈরির পথে হাঁটছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এই বোর্ড দিয়ে তৈরি হতে পারে ঘরের আসবাব, দেয়ালের প্যানেলিং, কিংবা অফিসের ইনটেরিয়রও।
টাকা নয়, এখন ‘টাকার কাঠ’!
RBI-র ২০২৪–২৫ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১৫,০০০ টন পুরনো এবং অচল নোট নষ্ট হয় ভারতে। এতদিন এই বিপুল নোট বর্জ্য হয় আগুনে পুড়িয়ে নয়তো মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হত। এই প্রক্রিয়াগুলি যেমন পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর, তেমনই অপচয়ও বটে। সেই কারণেই নোট ব্যবস্থাপনা বিভাগের নেতৃত্বে RBI শুরু করেছে এই সবুজ উদ্যোগ।
পরিবেশরক্ষায় RBI-র অগ্রগতি
এই প্রকল্পে RBI সহযোগিতা করছে ইউনিয়ন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনে থাকা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘উডেন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’-এর সঙ্গে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কাটা ও গুঁড়ো করা নোট থেকে তৈরি কণিকা বোর্ড যথাযথ টেকনিক্যাল মান পূরণ করে। ফলে এগুলিকে আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করতেও কোনও বাধা নেই।
নোটে ব্যবহৃত হয় নানা ধরনের রঙ, ফাইবার, সিকিউরিটি থ্রেড ও রাসায়নিক পদার্থ। এসব উপাদান থাকায় সাধারণভাবে এই নোটের পুনর্ব্যবহার সহজ নয়। তাই পুরনো নোটকে একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব উপায়ে নষ্ট করার উপায়, অন্যদিকে নতুন কিছু তৈরির সম্ভাবনাও জেগে উঠেছে।
কীভাবে তৈরি হচ্ছে এই বোর্ড?
নোটের কুচি বা ব্রিকেটগুলিকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ করে কাঠের কণিকার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ব্রিকেটগুলিকে চাপ ও তাপ প্রয়োগ করে বোর্ডের আকারে রূপ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এগুলিকে প্রয়োজন অনুসারে ছাঁটা, পালিশ ও মজবুত করা হয়। এই বোর্ডগুলিকে ব্যবহার করা যাবে আলমারি, টেবিল, চেয়ার, পার্টিশন ওয়াল বা অন্যান্য আসবাব তৈরিতে।

ব্যবসার নতুন দিগন্ত
এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিকে ঘিরে আগ্রহ প্রকাশ করছে একাধিক উৎপাদনকারী সংস্থা। ইতিমধ্যেই RBI বিভিন্ন নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে যারা এই পরিবেশবান্ধব বোর্ড তৈরির ক্ষমতা রাখে। দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের কাচামালের চাহিদা হ্রাস করতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে কাঠজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রেও নির্ভরতা কমবে।
এছাড়া ভারতের মতো দেশে যেখানে পুরনো নোটের পরিমাণ বছরে কয়েক হাজার টন, সেখানে এই বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে তা উৎপাদনের মাধ্যমে একটি টেকসই অর্থনৈতিক চক্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে এই খাতে।
শুধুই পরিবেশ নয়, অর্থনীতির লাভও
প্রকল্পটি যেমন পরিবেশরক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক হতে চলেছে। কাঠের পরিবর্তে নোটের কুচি ব্যবহার করলে গাছ কাটা কমবে, বনসম্পদ বাঁচবে। সেইসঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির জন্যও পুরনো নোট ধ্বংস করার ব্যয় কমবে এবং তা একটি নতুন অর্থনৈতিক সম্পদে পরিণত হবে।
আগামীতে আরও কী পরিকল্পনা?
RBI জানিয়েছে, তারা আরও পরিবেশবান্ধব উপায়ে নোট ধ্বংস ও পুনর্ব্যবহারের নানান বিকল্প খতিয়ে দেখছে। ভবিষ্যতে পুরনো নোট দিয়ে আরও নতুন পণ্য তৈরি হতে পারে, যেমন নির্মাণ সামগ্রী, শিল্প সামগ্রী বা অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যবহার।
এই উদ্যোগ সফল হলে শুধু ভারতে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারবে ভারত। অন্যান্য দেশগুলিও পুরনো নোটের পুনর্ব্যবহারে অনুপ্রাণিত হতে পারে এই প্রকল্প থেকে।
আজকের দিনে পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমন পরিস্থিতিতে RBI-র এই ‘টাকার কাঠ’ প্রকল্প শুধু একটি অভিনব ভাবনা নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্তও বটে। পুরনো, অচল নোট এখন আর শুধুই আবর্জনা নয়—তা হতে পারে আপনার ঘরের নতুন সোফা বা বুকশেলফ।
RBI-র এই সবুজ উদ্যোগ তাই শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এক নতুন যুগের সূচনা। যেখানে অর্থের প্রকৃত মূল্য শুধু বাজারেই নয়, পরিবেশেও প্রভাব ফেলে।