RBI-এর নিয়মে বদল, নির্মাণকালীন ঋণে প্রভিশন এখন মাত্র ১%

প্রকল্প ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI), যা ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা (NBFC)-র জন্য একটি বড় স্বস্তির বার্তা বহন…

Buy New Smartphones on Easy EMI Loans

প্রকল্প ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI), যা ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা (NBFC)-র জন্য একটি বড় স্বস্তির বার্তা বহন করছে। যদিও এই নিয়মের প্রভাব তাদের লাভজনিত দিক বা ব্যালান্স শিটে খুব বেশি পড়বে না বলেই মনে করছে ব্রোকারেজ সংস্থা মোতিলাল ওসওয়াল।

মোতিলাল ওসওয়ালের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, “আমরা মনে করি, ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসির মুনাফায় এই পরিবর্তনের প্রভাব নগণ্য হবে, কারণ বিদ্যমান ঋণপুস্তিকা (existing book)-তে এর কোনও প্রভাব পড়ছে না।”

   

তবে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “নতুন প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে, যেকোনও অতিরিক্ত প্রভিশনিং খরচ মূলত ঋণগ্রহীতাদের উপরে চাপানো হবে। বিশেষ করে সুদের হার কমার যে প্রবণতা চলছে, তার ফলে লেনদেনের ফলে আয় হার সমন্বয় করে এই খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।”

আরবিআইয়ের নয়া নির্দেশিকা: কী আছে তাতে?
২০২৪ সালে জারি করা খসড়া নির্দেশিকার তুলনায় ২০২৫ সালের চূড়ান্ত নির্দেশিকা অনেকটাই নমনীয় ও বাস্তবমুখী। গত বুধবার, আরবিআই ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (প্রজেক্ট ফাইনান্স) ডিরেকশনস, ২০২৫’ নামে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকাগুলির মধ্যে আয় স্বীকৃতি (income recognition), সম্পদ শ্রেণিবিভাগ (asset classification), এবং প্রভিশনিংয়ের (provisioning) উপর একটি বিস্তৃত কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন নিয়মগুলি আগামী ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। আরবিআই জানিয়েছে, খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশের পর প্রায় ৭০টি সংস্থা—যার মধ্যে ব্যাঙ্ক, এনবিএফসি, শিল্প সংস্থা, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, ব্যক্তিগত ব্যক্তি এবং কেন্দ্র সরকারও রয়েছে—তাদের মতামত জানিয়েছে। এই প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়েছে।

মূল পরিবর্তন: প্রভিশনিংয়ের হার কমানো:
নতুন নির্দেশিকায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে প্রভিশনিং সংক্রান্ত নিয়মে। আগের খসড়া নির্দেশিকায় যেখানে নির্মাণ পর্বে ৫% প্রভিশন রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেখানে নতুন চূড়ান্ত নির্দেশিকায় তা কমিয়ে মাত্র ১% করা হয়েছে।

Advertisements

এছাড়া, Date of Commencement of Commercial Operations (DCCO)-র পরে প্রভিশনিংয়ের হার নামিয়ে শুধু ০.৪% করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্প ঋণদাতারা তাঁদের মূলধনের উপর চাপ কম অনুভব করবেন এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও আগ্রহী হবেন।

স্ট্রেস রেজলিউশনের নয়া কাঠামো:
নতুন নির্দেশিকায় একটি “principle-based” স্ট্রেস রেজলিউশন কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যা সমস্ত রেগুলেটেড এন্টিটির (REs) জন্য প্রযোজ্য হবে। এর ফলে, ঋণদাতারা একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বাস্তবভিত্তিক পদ্ধতিতে সমস্যাগ্রস্ত প্রকল্প ঋণ পরিচালনা করতে পারবেন।

ইতিবাচক প্রভাব এবং সামগ্রিক মূল্যায়ন:
মোতিলাল ওসওয়ালের রিপোর্ট অনুসারে, “এই নয়া নিয়মাবলি মূলধন ব্যবহারে ভার কমিয়েছে, কিন্তু সতর্কতাও বজায় রেখেছে। অর্থাৎ, এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি, যা প্রকল্প ঋণের ধারাবাহিক প্রবাহ নিশ্চিত করবে, আবার ঋণদাতার ব্যালান্স শিট বা লাভের ওপর তেমন কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরণের নির্দেশিকা বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে গৃহীত হয়েছে এবং এর ফলে ব্যাঙ্ক ও এনবিএফসিগুলির প্রকল্প ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা ও আগ্রহ উভয়ই বাড়বে। তদুপরি, যেহেতু বিদ্যমান ঋণপুস্তিকাতে এটি প্রযোজ্য হচ্ছে না, তাই মূলধনী চাপ বা ক্ষতির সম্ভাবনাও নেই।

আরবিআইয়ের নতুন প্রকল্প ঋণ নির্দেশিকা সামগ্রিকভাবে ঋণদাতাদের জন্য সহায়ক হতে চলেছে। প্রভিশনিং সংক্রান্ত শিথিলতা তাদের মূলধনের দক্ষতা বাড়াবে এবং প্রকল্প অর্থায়নে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। যদিও নতুন ঋণে কিছু অতিরিক্ত খরচ ঋণগ্রহীতাদের উপর চাপানো হতে পারে, তবুও নিয়মগুলির সামগ্রিক প্রভাব ঋণদাতাদের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।