কেমন আছে ২০০০ টাকার নোট? আরবিআই দিল চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সম্প্রতি ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালের ১৯ মে এই নোটগুলি প্রচলন থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা…

RBI Reveals Only ₹6,181 Crore of ₹2000 Notes Still in Circulation

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সম্প্রতি ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালের ১৯ মে এই নোটগুলি প্রচলন থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা করা হয়েছিল। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ২০০০ টাকার নোটের মোট মূল্যের ৯৮.২৬% ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে ফিরে এসেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এই নোট প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া, এর প্রভাব এবং জনগণের জন্য উপলব্ধ সুবিধাগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহার: পরিসংখ্যান ও প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ১৯ মে, আরবিআই ঘোষণা করেছিল যে ২০০০ টাকার নোট প্রচলন থেকে প্রত্যাহার করা হবে। সেই সময়ে, এই নোটগুলির মোট মূল্য ছিল ৩.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত, এই মূল্য কমে ৬,১৮১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট নোটের ৯৮.২৬% ফিরে এসেছে বলে নির্দেশ করে। এর অর্থ, এখনও প্রায় ৬,১৮১ কোটি টাকার ২০০০ টাকার নোট জনগণের হাতে রয়েছে। আরবিআই জানিয়েছে, এই নোটগুলি এখনও বৈধ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

   

২০০০ টাকার নোট ২০১৬ সালের নভেম্বরে চালু করা হয়েছিল, যখন ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটের বৈধতা বাতিল করা হয়। এই নোট চালুর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতির মুদ্রার চাহিদা দ্রুত পূরণ করা। তবে, অন্যান্য মূল্যবান নোট পর্যাপ্ত পরিমাণে উপলব্ধ হওয়ার পর ২০১৮-১৯ সালে এই নোটের মুদ্রণ বন্ধ করা হয়। আরবিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চের আগে জারি করা ৮৯% নোট তাদের প্রায় ৪-৫ বছরের আনুমানিক আয়ুষ্কালের শেষে পৌঁছেছে। এছাড়া, এই নোটগুলি লেনদেনে তেমন ব্যবহৃত হত না, যা প্রত্যাহারের একটি অন্যতম কারণ।

নোট বিনিময় ও জমার সুবিধা
আরবিআই ২০২৩ সালের ১৯ মে থেকে ২০০০ টাকার নোট বিনিময় ও জমার সুবিধা চালু করেছিল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব ব্যাঙ্ক শাখায় এই নোট জমা বা বিনিময় করা যেত। এরপর থেকে, ১৯টি আরবিআই ইস্যু অফিসে এই সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে। এই অফিসগুলি অবস্থিত আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, বেলাপুর, ভোপাল, ভুবনেশ্বর, চণ্ডীগড়, চেন্নাই, গুয়াহাটি, হায়দ্রাবাদ, জয়পুর, জম্মু, কানপুর, কলকাতা, লখনউ, মুম্বই, নাগপুর, নিউ দিল্লি, পাটনা এবং তিরুবনন্তপুরমে।

২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর থেকে, এই অফিসগুলি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০০০ টাকার নোট জমা গ্রহণ করছে। এছাড়া, জনগণ ভারতের যেকোনো ডাকঘর থেকে ইন্ডিয়া পোস্টের মাধ্যমে এই নোটগুলি আরবিআই-এর ইস্যু অফিসে পাঠিয়ে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারেন। একবারে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত নোট বিনিময় করা যায়। যদি একদিনে ৫০,০০০ টাকার বেশি নোট জমা দেওয়া হয়, তবে প্যান নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।

প্রত্যাহারের প্রভাব ও জনগণের প্রতিক্রিয়া
২০২৩ সালের জুনের মধ্যে, ২০০০ টাকার নোটের ৭৬% ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছিল, যার মধ্যে ৮৭% জমা এবং ১৩% বিনিময় করা হয়েছিল। এই দ্রুত প্রত্যাবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে জনগণ আরবিআই-এর নির্দেশিকা মেনে চলেছে। তবে, এই প্রত্যাহার নিয়ে কিছু বিতর্কও হয়েছে। ২০২৩ সালে দিল্লি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে আরবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত “ক্লিন নোট পলিসি” ছাড়া অন্য কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। তবে, আদালত এই মামলা খারিজ করে দেয়।

Advertisements

কিছু রাজনৈতিক নেতা এই পদক্ষেপকে “কালো টাকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সার্জিকাল স্ট্রাইক” বলে প্রশংসা করলেও, বিরোধী দলের নেতারা এটিকে ২০১৬ সালের নোটবন্দীর ভুলের স্বীকৃতি হিসেবে দেখেছেন। সাধারণ জনগণের মধ্যে এই প্রত্যাহার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কলকাতার একজন ব্যবসায়ী, রাহুল দাস (৪২), বলেন, “২০০০ টাকার নোট লেনদেনে ব্যবহার করা কঠিন ছিল। তবে, এটি এখনও বৈধ থাকায় আমরা ব্যাঙ্কে জমা দিতে পারছি। এটি একটি ভালো পদক্ষেপ।”

অর্থনৈতিক প্রভাব
২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের ফলে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে প্রচুর পরিমাণে টাকা জমা হয়েছে। আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ৮৫% নোট ব্যাঙ্কে জমা হয়েছে। এই জমা অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে এবং কালো টাকা ও জাল মুদ্রার ব্যবহার কমাতে সাহায্য করেছে। তবে, এই প্রক্রিয়া ব্যাঙ্কগুলির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে, কারণ তাদের কর্মী এবং কাউন্টার বাড়াতে হয়েছে।

জনগণের জন্য পরামর্শ
যারা এখনও ২০০০ টাকার নোট ধরে রেখেছেন, তাদের জন্য আরবিআই-এর পরামর্শ হলো নিকটস্থ ইস্যু অফিসে গিয়ে নোট বিনিময় বা জমা করা। ইন্ডিয়া পোস্টের মাধ্যমেও এই নোট পাঠানো যায়। যদি ৫০,০০০ টাকার বেশি মূল্যের নোট জমা দেওয়া হয়, তবে প্যান কার্ড এবং ব্যক্তিগত বিবরণ সহ একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে।

২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া ভারতের মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ৯৮.২৬% নোট ফিরে আসা সত্ত্বেও, এখনও ৬,১৮১ কোটি টাকার নোট প্রচলনে রয়েছে। এই নোটগুলি বৈধ থাকায় জনগণের উচিত নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া। আরবিআই-এর এই পদক্ষেপ অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি পদক্ষেপ। তবে, জনগণের মধ্যে এই প্রক্রিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং বাকি নোটগুলি দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য আরবিআই-এর আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।