ভারতের ডিজিটাল অর্থনৈতিক পরিকাঠামো আরও একধাপ এগিয়ে গেল। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, মার্চ ২০২৫-এ দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ইনডেক্স (DPI) বেড়ে হয়েছে ৪৯৩.২২, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১০.৭ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সূচক ছিল ৪৬৫.৩৩। মাত্র সাত বছরে প্রায় পাঁচগুণ বৃদ্ধি এই সূচকের, যা স্পষ্ট করে দিচ্ছে ভারতে ডিজিটাল লেনদেন কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে।
কী এই ডিজিটাল পেমেন্ট ইনডেক্স?
RBI ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ডিজিটাল পেমেন্ট ইনডেক্স চালু করে, যার ভিত্তি সূচক ছিল ১০০। এই সূচক ডিজিটাল লেনদেনের গ্রাহক গ্রহণযোগ্যতা, পরিকাঠামোগত সক্ষমতা ও লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। প্রতিবছর মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে এই সূচক প্রকাশিত হয়।
ডিজিটাল পেমেন্ট ইনডেক্স মোট পাঁচটি মূল মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়:
1. পেমেন্ট এনাবলার্স (২৫%)
2. ডিমান্ড-সাইড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (১০%)
3. সাপ্লাই-সাইড ইনফ্রাস্ট্রাকচার (১৫%)
4. পেমেন্ট পারফরম্যান্স (৪৫%)
5. কনজিউমার সেন্ট্রিসিটি (৫%)
এই সূচকের মাপকাঠিতে অন্তর্ভুক্ত থাকে ATM-এর সংখ্যা, POS টার্মিনাল, কিউআর কোড, ব্যাঙ্ক শাখা, UPI, IMPS, NEFT, RTGS ও ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের পরিমাণ ও মান।
বৃদ্ধির কারণ কী?
RBI তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই বৃদ্ধির পেছনে মূল চালিকা শক্তি হল —
ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের অবকাঠামোগত উন্নতি, সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য এবং ডিজিটাল লেনদেনের সামগ্রিক পারফরম্যান্স।
বিশেষত, গ্রামীণ ও আধা-শহরাঞ্চলে ডিজিটাল পরিকাঠামো বৃদ্ধি, কম খরচে মোবাইল ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল প্রচারাভিযান এই প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।
ডিজিটাল লেনদেনে UPI-এর আধিপত্য:
বর্তমানে ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থান করছে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI)।
২০২৫ সালের জুন মাসে UPI-এর মাধ্যমে ১৮.৩৯ বিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ২৪.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। UPI এখন একা হাতে দেশের ৮৫ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন পরিচালনা করছে এবং বিশ্বব্যাপী রিয়েল-টাইম ডিজিটাল পেমেন্টের ৫০ শতাংশ ভারতেই হচ্ছে — যা ভারতকে এই ক্ষেত্রের বিশ্বনেতার আসনে বসিয়েছে।
পূর্ববর্তী বৃদ্ধির তুলনা:
২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত DPI বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৩.৩ শতাংশ, সূচক বেড়ে হয়েছিল ৪৪৫.৫০। এবার মার্চ ২০২৫-এ তা বেড়ে হয়েছে ৪৯৩.২২ — যা কিছুটা ধীরগতির হলেও স্থিতিশীল ও টেকসই বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
ডিজিটাল ফাইনান্সের ভবিষ্যৎ:
বর্তমানে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও দ্রুতবর্ধনশীল ফিনটেক হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। NEFT, RTGS, IMPS-এর পাশাপাশি UPI, AePS (Aadhaar-enabled Payment System), ও নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা ভারতের ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আগলে রাখছে। কেন্দ্র সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ মিশনের প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার এই ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকেও শক্তিশালী করছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়:
যদিও এই অগ্রগতি অত্যন্ত ইতিবাচক, তবুও কিছু সমস্যা ও সতর্কতা রয়ে গিয়েছে:
সাইবার সুরক্ষা, গ্রাহক সচেতনতার অভাব, জালিয়াতি প্রতিরোধে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজের সমস্যা এখনও অনেক জায়গায় আছে।
সেই কারণে RBI এবং সরকারকে আরও বেশি জোর দিতে হবে:
সাইবার হাইজিন এবং গ্রাহক সুরক্ষার ওপর, ডিজিটাল শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং ব্যাঙ্কিং পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণে।
ডিজিটাল লেনদেনের এই উত্থান ভারতের অর্থনীতিকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলছে। RBI-DPI সূচকের ধারাবাহিক বৃদ্ধি তা-ই প্রমাণ করে। দেশের প্রতিটি স্তরে ডিজিটাল লেনদেনের এই গ্রহণযোগ্যতা ভবিষ্যতের ভারতকে আরও অর্থনৈতিকভাবে সুসংহত ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।