ভারতের আর্থিক নীতিতে বড়সড় দিকবদল। টানা মূল্যস্ফীতি পতন এবং প্রবৃদ্ধির শক্তিশালী গতিকে সামনে রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশে নামাল। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার ঘোষণায় গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র জানালেন, তিন দিনের বৈঠকের পরে মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) একযোগে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে—এটি মুদ্রানীতি সহজীকরণের চক্রের প্রত্যাবর্তন, যা পাঁচ বছর পর।
ডিসইনফ্লেশন–প্রবৃদ্ধি—দুইয়ের সুষম দূরত্বে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর মলহোত্র স্পষ্ট ভাষায় জানান, “বর্তমান পরিস্থিতি কাটের পক্ষে অসাধারণভাবে অনুকূল।” খাদ্যমূল্যে স্থিতি, টানা ডিসইনফ্লেশন এবং বেস ইফেক্ট—এই তিনে মিলেই মূল্যস্ফীতিকে নামিয়ে এনেছে প্রায় নজিরবিহীন স্তরে। অক্টোবরের সিপিআই নেমেছে ০.২৫ শতাংশে—ভারতের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রিডিং। অন্যদিকে প্রথমার্ধে ৮ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ-শহুরে উভয় বাজারে চাহিদার ধারাবাহিকতা আরবিআই-কে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরও চাঙ্গা করতে উৎসাহ দিয়েছে।
গভর্নর বলেন, “গ্রামীণ চাহিদা সুদৃঢ়, শহরের পুনরুদ্ধার স্থিতিশীল, আর বেসরকারি বিনিয়োগ ও ব্যাঙ্ক ঋণ—সব মিলিয়ে অর্থনীতির সার্বিক ভিত্তি এখন যথেষ্ট শক্ত।” এই আর্থিক বছরে মোট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট কাট, ফের ‘অ্যাকমোডেটিভ’ অবস্থানে এমপিসি
ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দফায় মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পর আজকের ২৫ পয়েন্টের সিদ্ধান্তে এফওয়াই২৬-এ মোট রেট-কাট দাঁড়াল ১২৫ বেসিস পয়েন্টে।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ—এমপিসি ৫-১ ভোটে ‘নিউট্রাল’ থেকে ‘অ্যাকমোডেটিভ’ স্টান্সে ফিরে এল, যা ভবিষ্যতে আরও কাটের সম্ভাবনার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
অর্থনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া: ঋণগ্রহীতা ও বাজার—দু’পক্ষেই স্বস্তির হাওয়া RBI Repo Rate Cut
অ্যান্ড্রোমেডা সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের কো-সিইও রাহুল কপূর বলেন, “এই কাট হোম ও অটো লোনের ইএমআই কমাবে, চাহিদা বাড়াবে, রিয়েল এস্টেটেও পুনরুজ্জীবন আনবে। গ্রাহকদের হাতে বাড়তি অর্থ ফেরার সরাসরি সুফল মিলবে।”
অ্যাকুইট রেটিংসের সিইও শঙ্কর চক্রবর্তী অবশ্য পরিস্থিতিকে দেখছেন যথেষ্ট সূক্ষ্মতায়, “ডিসইনফ্লেশন যেমন কার্যত কাট দাবি করছিল, তেমনই ৮.২% জিডিপি প্রবৃদ্ধি সতর্কতারও বার্তা দিচ্ছিল। তাই সিদ্ধান্তটি নিখুঁত সময়জ্ঞান রেখেই নেওয়া।”
বেসিক হোম লোন-এর সিইও অতুল মঙ্গা, যিনি রেট-পজের পক্ষপাতী ছিলেন, শেষ পর্যন্তও স্বীকার করেছেন,
“ফ্লোটিং রেট ঋণগ্রহীতারা দীর্ঘদিনের চাপ থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতি লক্ষে ইএমআই ২০০–৩০০ টাকা কমবে—এটি পরিশোধক্ষমতা বাড়াবে, বাজারে স্থিতি ফিরিয়ে আনবে।”
ক্রিসিলের চিফ ইকোনমিস্ট ধর্মকীর্তি জোশী আরও এগিয়ে বলেন, “অ্যাকমোডেটিভ স্টান্স দেখাচ্ছে যে রেট-কাট চক্র আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কাটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল, যদি মূল্যস্ফীতি একইভাবে নীচে থাকে।”
মুদ্রানীতির সামনে পরবর্তী অধ্যায়: নজর ফেব্রুয়ারির বৈঠকে
আগস্টের বিরতির পরে এই প্রথম সুদের হারে পরিবর্তন আনল কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। সঞ্জয় মলহোত্রর নেতৃত্বে ২০২৫ সালে আরবিআই যেভাবে পোস্ট-প্যান্ডেমিক পুনরুদ্ধার থেকে বর্তমানে শৃঙ্খল নির্ভর সহজীকরণের দিকে এগোচ্ছে, তার আজকের সিদ্ধান্ত সেই পথরেখাকেই স্পষ্ট করছে।
আজকের বার্তা একটাই—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকলে প্রবৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে আরবিআই। ফেব্রুয়ারির এমপিসি-র উপরেই এখন নির্ভর করছে ভারতের মুদ্রানীতির পরবর্তী মোড়।
