মুম্বই: বিশ্ব অর্থনীতির আকাশে অস্থিরতার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা। মার্কিন সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং চীন-আমেরিকার বাণিজ্যিক পরিমণ্ডলে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) নীরবে একটা শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে প্রকাশিত অর্থের বৈদেশিক মুদ্রার রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে আরবিআই ৬৪ টন সোনা দেশে ফিরিয়ে এনেছে।
এই পদক্ষেপের ফলে ভারতের মোট সোনার রিজার্ভ এখন ৮৮০.৮ টন, যার মধ্যে ৫৭৫.৮ টন দেশীয় ভল্টে নিরাপদে রাখা হয়েছে। এটা শুধু সংখ্যা নয়, বরং জাতীয় অর্থনীতির একটা সতর্কতামূলক জয়গরণ যেখানে বিদেশী ভান্ডারে রাখা সম্পদকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যাতে কোনো ভূ-রাজনৈতিক চাপে তা হাতছাড়া না হয়।
বৃষ্টিতে বাধা সত্বেও স্কাইয়ের ব্যাটে রেকর্ডের ফুলঝুরি
মার্চ ২০২৩ থেকে এই প্রক্রিয়ায় আরবিআই মোট ২৭৪ টন সোনা ফিরিয়ে এনেছে, যা ভারতকে বিশ্বের সোনার রিজার্ভে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। রিপোর্ট অনুসারে, এখনও ২৯০.৩ টন সোনা ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড এবং ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (বিআইএস)-এ রয়েছে, আর ১৪ টন সোনা ডিপোজিট স্কিমের অংশ। কিন্তু দেশীয় ভান্ডারে সোনার অংশ এখন ৬৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা চার বছর আগের দ্বিগুণ। এই পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ওয়ারফেয়ারের ছায়া।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর জি৭ দেশগুলো রাশিয়ার বিদেশী রিজার্ভ বাজেয়াপ্ত করে। আর আফগানিস্তানের তালেবান ক্ষমতা দখলের পরও তাদের সম্পদ ফ্রিজ হয়। এসব ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিদেশী ব্যাঙ্কগুলোতে রাখা সোনা কখনোই পুরোপুরি নিরাপদ নয় রাজনৈতিক চাপে সেগুলোকে ‘হোস্টেজ’ বানানো যায়। আরবিআই-এর গভর্নর সতিকান্ত দাসের নেতৃত্বে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে, যাতে ভারতের ৭৭৬ বিলিয়ন ডলারের ফরেক্স রিজার্ভ আরও বিবেচক।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম এ বছর ৫২ শতাংশ উঠে ৪,৩৮১ ডলার প্রতি আউন্সের সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এই উত্থানের পিছনে রয়েছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর আশা, মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলোর অবিরাম ক্রয়। আরবিআই-এর এই সোনা ফিরিয়ে আনায় ভারতের রিজার্ভের মূল্য ৩১ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে, এখন সোনার অংশ মোট রিজার্ভের ১৩.৯ শতাংশ।
এটা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং জাতীয় গর্বের বিষয়। বিশেষজ্ঞ রিতেশ জৈন বলেছেন, “এই নতুন বিশ্বে, যদি সোনা আপনার হাতে না থাকে, তাহলে সেটা আপনার নয়।” জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোও একইভাবে তাদের সোনা ফিরিয়ে এনেছে, যা একটা গ্লোবাল ট্রেন্ড। ভারতের ক্ষেত্রে এটা আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাই।


