মুম্বই: দুই বছর পর অবশেষে কমল রেপো রেট৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ১২তম মুদ্রানীতির বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানোর কথা ঘোষণা করল। নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়, যা অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন এক ঘোষণায়, আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “বর্তমান এবং ভবিষ্যত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর, মনিটারি পলিসি কমিটি একমত হয়ে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেট ৬.২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।” অর্থাৎ ৬.৫০ শতাংশ থেকে রেপো রেট ২৫ পয়েন্ট দাঁড়াল ৬.২৫ শতাংশ।
২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো রেপো রেট কমানো হল। পাশাপাশি, এই সভা ছিল সঞ্জয় মালহোত্রার গভর্নর হিসেবে প্রথম মুদ্রানীতির পর্যালোচনা সভা। পূর্বতন গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে দায়িত্ব নেন সঞ্জয় মালহোত্রা। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের এটাই ছিল শেষ মুদ্রানীতির বৈঠক। বৈঠক শুরু হয়েছিল ৫ ফেব্রুয়ারি৷
CREDAI ন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট বোমান ইরানি মন্তব্য করেছেন, “আরবিআই-র এই সিদ্ধান্ত বাজেটে ঘোষিত খরচ বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
এই সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর আগে ক্যাশ রিজার্ভ রেট (CRR) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত তরলতা সঞ্চালিত হয়েছে। অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য আরবিআই-এর এ ধরনের পদক্ষেপ আরও সহায়ক হবে।
তবে, আরবিআইয়ের সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল মুদ্রাস্ফীতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা, যা এখনও মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরবর্তী সময়ে রেপো রেট আরও কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যাতে সুদের হার কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং খরচ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা যায়।
এদিকে, আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানিয়েছেন, “২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশীয় অর্থনীতি ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, যা প্রধানত ব্যক্তিগত খরচ বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের ব্যয়ের পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সম্ভব হবে।”
রেপো রেট কমানোয় নতুন করে গাড়ি-বাড়ির জন্য ঋণ নিলে কিংবা ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রেও অনেকটাই সুবিধা পাবেন ঋণগ্রহীতারা। হিসাব কষে দেখতে গেলে, কেউ যদি ৫০ লক্ষ টাকার গৃহ ঋণ নিয়ে থাকেন, তাহলে ২০ বছরের জন্য সুদের হার ৮.৫ শতাংশের হিসেবে প্রতি মাসে ইএমআই দিতে হত ৪৩ হাজার ৫৯ টাকা। এবার মাসে ইএমআই-এর পরিমাণ কমে হবে ৪২ হাজার ৪৫২ টাকা। অর্থাৎ মাসিক ৬০৭ টাকার সাশ্রয় করতে পারবেন ঋণগ্রহীতারা। বছরের হিসেবে অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ৭ হাজার ২৮৪ টাকা।