মঙ্গলবার প্রকাশিত HSBC গ্লোবাল রিসার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) ডিসেম্বরের মনিটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠকে শেষবারের মতো ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমাতে পারে। এতে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ রেপো রেট ৫.২৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর ফলে আগামী আগস্ট এবং অক্টোবরের MPC বৈঠকে রেপো রেটে কোনো পরিবর্তন না করার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিসেম্বরের বৈঠকেই চূড়ান্তভাবে রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
মূল্যস্ফীতির হ্রাস এবং খাদ্যপণ্যের প্রভাব:
জুন মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি বাজারের প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম, মাত্র ২.৩ শতাংশ হয়েছে। এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে সিজনালি অ্যাডজাস্টেড মাসিক বৃদ্ধিও স্থিতিশীল ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় অনেক কম, যা সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। পণ্যগুলির মধ্যে ডাল, শাকসবজি, সিরিয়াল এবং মশলার দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে ফলমূল এবং ভোজ্য তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে গড় মূল্যস্ফীতি:
২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে গড় মূল্যস্ফীতি ২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা RBI-এর পূর্বাভাস করা ২.৯ শতাংশের তুলনায় কম। এই নিম্নমুখী প্রবণতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রেট কমানোর দিকে ধাবিত করছে।
জুন মাসের পাইকারি মূল্য সূচক (WPI)-এর তথ্যও বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে নিচে এসেছে। WPI জুনে -০.১ শতাংশ হয়েছে, যেখানে বাজারের প্রত্যাশা ছিল +০.৫ শতাংশ। সিজনালি অ্যাডজাস্টেড ভিত্তিতে পাইকারি মূল্য মাসিক ভিত্তিতে ০.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের দাম জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করেছে, যা পাইকারি মূল্যকে প্রভাবিত করছে।
পণ্য আমদানি শুল্ক এবং ভোজ্য তেলের দাম:
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে মে মাসের ৩০ তারিখ থেকে পণ্য আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বৈশ্বিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এই শুল্ক হ্রাসের প্রভাব অনেকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
সোনার দাম ও মূল মূল্যস্ফীতি:
মূল মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে উচ্চ অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে সোনার দাম বৃদ্ধি। সোনা, যা CPI বাস্কেটের প্রায় ১.১ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে, জুন মাসে বছরে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। মে মাসে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৩২.৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার চাহিদা বাড়তে থাকলে মূল মূল্যস্ফীতি কিছুটা চাপে থাকবে।
জুলাইয়ের মূল্যস্ফীতি এবং আরবিআই-এর সহনশীলতা:
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে থাকার প্রবণতা দেখাচ্ছে, যা RBI-এর নির্ধারিত নিম্ন সীমার চেয়েও নিচে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত, যা ডিসেম্বরের বৈঠকে রেপো রেট কমানোর পক্ষে সহায়ক প্রমাণ হতে পারে।
বাজার ও অর্থনীতির সম্ভাবনা:
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি মূল্যস্ফীতি এই ধারা বজায় রাখে এবং খাদ্যপণ্যের দাম আরও কমে, তবে ডিসেম্বরের পর রেপো রেটে কোনো বড় পরিবর্তন নাও হতে পারে। এই কমানো রেপো রেট দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ এবং ঋণপ্রদানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
একইসাথে, এটি গৃহঋণ, গাড়ির ঋণসহ বিভিন্ন খাতে সুদের হার কমিয়ে জনগণের উপর ঋণ পরিশোধের চাপও হ্রাস করতে পারে। তবে, সোনার দাম এবং বৈশ্বিক তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়মিত নজরে রাখা জরুরি, কারণ এগুলো মূল মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
মোটের ওপর, চলমান খাদ্যপণ্যের দাম কমা, পাইকারি মূল্য সূচকের ঋণাত্মক প্রবণতা এবং মোট মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কাছাকাছি থাকা ইঙ্গিত দেয় যে RBI ডিসেম্বরের বৈঠকে রেপো রেট কমিয়ে ৫.২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে। এটি দেশের আর্থিক নীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সাধারণ জনগণ এবং বাজারের অংশগ্রহণকারীদের জন্য এই পদক্ষেপ অনেকটা স্বস্তির খবর বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। ডিসেম্বরের বৈঠককে ঘিরে তাই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এবং নজর এখন তুঙ্গে।