কো-লেন্ডিং গাইডলাইনে বড় পরিবর্তন, RBI-এর নয়া প্রস্তাব

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI), সম্প্রতি দেশের ঋণদানের পরিকাঠামো আরও মজবুত ও সুরক্ষিত করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছে। ঋণের জগতে আরও…

RBI Proposes Major Reforms in Co-Lending

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI), সম্প্রতি দেশের ঋণদানের পরিকাঠামো আরও মজবুত ও সুরক্ষিত করতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছে। ঋণের জগতে আরও স্বচ্ছতা, বিস্তৃতি এবং সুরক্ষার উদ্দেশ্যে এই পরিবর্তনগুলি আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আরবিআই।

কো-লেন্ডিং মডেল সম্প্রসারণের প্রস্তাব

প্রথমত, আরবিআই বর্তমান কো-লেন্ডিং মডেলকে আরও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করেছে। এখন পর্যন্ত এই ব্যবস্থাটি শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল কোম্পানিগুলির (NBFCs) মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এবং শুধুমাত্র প্রায়োরিটি সেক্টর লোনেই প্রযোজ্য ছিল।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সমস্ত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক সংস্থাগুলির মধ্যে কো-লেন্ডিং প্রয়োগ করা হবে এবং এটি শুধুমাত্র প্রায়োরিটি সেক্টরের ঋণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। এর ফলে, ব্যাঙ্ক, NBFC, ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলি একসঙ্গে কাজ করে বৃহৎ জনগণের কাছে ঋণ পৌঁছে দিতে পারবে।

নন-ফান্ড-বেসড ফ্যাসিলিটির ওপর সমন্বিত নির্দেশিকা

দ্বিতীয়ত, RBI এমন এক পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা প্রকাশ করতে চলেছে, যা সমস্ত নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির মধ্যে নন-ফান্ড-বেসড ফ্যাসিলিটির নিয়মগুলিকে একত্রিত করবে। এই ধরণের ফ্যাসিলিটিতে ব্যাঙ্কের নিজস্ব টাকা সরাসরি ধার না দিয়ে গ্যারান্টি বা অ্যাসিউরেন্সের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

এই নির্দেশিকা বিশেষ করে পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে অর্থের নতুন উৎস খুঁজে পেতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলি আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং কার্যকর পদ্ধতিতে সহায়তা করতে পারবে।

পার্শিয়াল ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট (PCE)-এর নয়া নিয়ম

আরবিআই PCE সংক্রান্ত নির্দেশিকাগুলিকেও নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলির মাধ্যমে PCE ব্যবস্থার ব্যবহার সীমিত। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ঋণদাতারা নির্দিষ্ট অংশের ঋণ ফেরতের গ্যারান্টি দেয়, যা ঋণগ্রহীতার পক্ষে অর্থ সংগ্রহ সহজ করে তোলে। নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে এই ব্যবস্থাটি আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রেপো রেট হ্রাস: ঋণ গ্রহীতাদের স্বস্তি

এপ্রিল ৭ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দ্বিমাসিক মনেটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠকে, আরবিআই সর্বসম্মতভাবে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.২৫% থেকে ৬% করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পাঁচ বছর ধরে ৬.৫০% রেপো রেট অপরিবর্তিত থাকার পর, এটি দ্বিতীয়বার হ্রাস পেল।

Advertisements

রেপো রেট কমানোর ফলে ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে ঋণ নেওয়া আরও সস্তা হবে এবং এর ফলে ঋণদানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের সামগ্রিক আর্থিক প্রবাহকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।

ফিনটেক এবং NBFC-দের ভূমিকায় নতুন মাত্রা

এই নতুন পদক্ষেপগুলিকে স্বাগত জানিয়ে, ক্যাশে (CASHe)-এর সিইও ইয়শোরাজ ত্যাগী বলেন, “আরবিআই-এর নতুন কো-লেন্ডিং ফ্রেমওয়ার্ক সময়োপযোগী। ক্রমবর্ধমান ঋণের চাহিদা এবং হ্রাসপ্রাপ্ত রেপো রেটের মাঝে, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলি — ব্যাঙ্ক, NBFC, এবং ফিনটেক সংস্থাগুলি — একসঙ্গে এসে বহুমুখী সহযোগিতার মাধ্যমে ঋণদানের নয়া দিশা দেখাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই মডেল আরও ভালো পুঁজির ব্যবহার, ঝুঁকি ভাগাভাগির আরও কার্যকর ব্যবস্থা, এবং সর্বোপরি, নতুন ঋণগ্রহীতাদের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ খুলে দেবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিস্তার এবং ফিনটেক সংস্থার উদ্ভাবনী শক্তি, যদি বড় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক সক্ষমতার সঙ্গে মিলিত হয়, তবে দেশজুড়ে আরও অনেককে ঋণের আওতায় আনা সম্ভব হবে।”

RBI-এর এই নতুন প্রস্তাবগুলি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার পরিকাঠামোতে এক বড় রূপান্তরের সূচনা করবে। ঋণদাতাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রক স্পষ্টতা, এবং প্রযুক্তিনির্ভরতা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন সময় বলবে, এই পরিবর্তনগুলি কীভাবে ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শক্তিশালী করে তোলে।