এবারের দ্বি-মাসিক আর্থিক নীতি ঘোষণাকে ঘিরে দেশজুড়ে দৃষ্টি আটকে আছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র দিকে। আগামী বুধবার, ১ অক্টোবর সকাল ১০টা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা প্রকাশ করবেন মুদ্রানীতি কমিটি (MPC)-র সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। আরবিআই-এর ইউটিউব চ্যানেল, এক্স হ্যান্ডেল এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এই ঘোষণা। দুপুর ১২টায় সাংবাদিক বৈঠকেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন গভর্নর।
এমপিসি বৈঠকের প্রেক্ষাপট:
ছয় সদস্যের মুদ্রানীতি কমিটির বর্তমান বৈঠক শুরু হয়েছিল ২৯ সেপ্টেম্বর, যা শেষ হবে ১ অক্টোবরের ঘোষণার মাধ্যমে। এই কমিটির চেয়ারম্যান আরবিআই গভর্নর স্বয়ং। তাঁরা মূলত দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সুদের নীতি ঠিক করেন। বিশেষ করে রেপো রেট বা ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার হার—যা অর্থনীতির গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতের মুদ্রানীতি বৈঠক ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়েছে ৩–৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ এবং ৪–৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ তারিখে।
Also Read | সরকারি সিকিউরিটির নিলামে নতুন কমিশন হার প্রকাশ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
কী আশা করছে বাজার?
বিশ্লেষকরা এ নিয়ে বিভক্ত। অনেকেই মনে করছেন আরবিআই রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখবে ৫.৫০ শতাংশে, কারণ চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ১০০ বেসিস পয়েন্ট বা ১ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। আগস্ট মাসের বৈঠকেও আরবিআই স্থিতাবস্থা বজায় রেখেছিল, মূলত বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির প্রভাব বিবেচনায় রেখে।
গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বারও রেট অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হয়তো “ডোভিশ” সুরে নরম মনোভাব প্রকাশ করবে। তারা অনুমান করছে ডিসেম্বর মাসে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো হতে পারে। অন্যদিকে বাজাজ ব্রোকিং বলছে, জুনে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কাটছাঁটের পর আগস্টে বিরতি দেওয়া হয়েছিল। তাই এবারও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সতর্ক পদক্ষেপ নেবে।
শিল্পমহলের প্রত্যাশা:
হাউসিং ডট কম-এর সিইও প্রভীন শর্মা মনে করছেন, উৎসবের মরশুমে রেপো রেট কমানো হলে আবাসন বাজারে বিরাট চাঙ্গাভাব আসবে। ক্রেতারা ঋণের সুদ কমার সুবিধা পেলে ঘর কেনার সিদ্ধান্ত দ্রুত নেবেন।
অন্যদিকে জিরাফ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিনীত আগরওয়াল বলছেন, ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সুদ কমানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এবার রেট অপরিবর্তিত থাকবে, বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে ৭.৮ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক জিএসটি হ্রাস বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Also Read | রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তে বাড়ছে ট্রেডিং সময়, কবে থেকে কার্যকর?
পিরামলের প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবোপম চৌধুরী অবশ্য মনে করছেন, এ বারও ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমানো উচিত। তাঁর মতে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্পোরেট ঋণে গতিশীলতা আনতে এই পদক্ষেপ জরুরি।
কেন রেপো রেট গুরুত্বপূর্ণ?
রেপো রেট কমলে সাধারণ মানুষের ঋণের ইএমআই কমে যায়, ফলে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। তবে সঞ্চয়ের উপর সুদের হারও তখন হ্রাস পায়। সাম্প্রতিক সময়ে ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল ও জুনে আরবিআই ধারাবাহিকভাবে রেপো রেট কমিয়েছে, যদিও আগস্টে বিরতি দিয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির অবস্থা:
রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গবেষণা বলছে, অক্টোবর মাসে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি বা CPI নেমে আসতে পারে প্রায় ১.১ শতাংশে। নতুন জিএসটি নিয়ম কার্যকর হওয়ায় দামও কিছুটা কমেছে। এতে আরবিআই-এর হাতে নীতি নির্ধারণে কিছুটা অবকাশ তৈরি হয়েছে।
সব মিলিয়ে, অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনাই বেশি, তবে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। উৎসবের মরশুমে আরবিআই-এর এই সিদ্ধান্ত সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে শিল্পপতি—সবাই গভীরভাবে লক্ষ্য করবে। কারণ এই সিদ্ধান্তই আগামী মাসগুলিতে ঋণগ্রহণ, বিনিয়োগ ও ভোক্তা চাহিদার ছবিকে অনেকাংশে নির্ধারণ করবে।