২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর RBI-এর গোল্ড লোনের নীতি, জানাল অর্থ মন্ত্রক

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সোনার ঋণ সংক্রান্ত যে খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করেছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,…

Gold Rate on 27 May: Check 18, 22, 24 Carat Gold Prices in Chennai, Mumbai, Delhi, Kolkata and Other Cities

রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সোনার ঋণ সংক্রান্ত যে খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করেছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা—যারা সাধারণত ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকেন—তাদের যাতে কোনও রকমের অসুবিধা না হয়, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকার আরবিআইকে পরামর্শ দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (DFS) সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে জানায় যে, আরবিআই-এর কাছে সুপারিশ করা হয়েছে, যেন ছোট টিকিটের সোনার ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ না করা হয় এবং ঋণ মঞ্জুরির প্রক্রিয়া যেন সময়মতো এবং সহজে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি, নতুন নিয়মাবলি কার্যকর করার সময়সীমা হিসেবে ১ জানুয়ারি, ২০২৬-এর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্যের সময় পাওয়া যায়।

   

এই ঘোষণার পরে, মুথুট ফিনান্স এবং মানাপুরম ফিনান্সের মতো স্বর্ণ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির শেয়ার প্রাইস আগের পতন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাংক খসড়া নির্দেশিকা প্রকাশ করে, যার মাধ্যমে সোনার ঋণের জন্য অনুরূপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে নানান প্রস্তাব রাখা হয়। প্রস্তাবিত নিয়মাবলির মাধ্যমে আন্ডাররাইটিং মান উন্নয়ন, জামানতের ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালীকরণ এবং ঋণের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েছে আরবিআই।

আরবিআই গভর্নর স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, এই খসড়া নিয়মগুলি কঠোরতা নয়, বরং বিদ্যমান নিয়মাবলির যৌক্তিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। তবে ঋণদাতা সংস্থাগুলি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, কঠোর আন্ডাররাইটিং মানদণ্ড প্রয়োগ হলে ঋণ মঞ্জুরিতে বিলম্ব হতে পারে এবং এর ফলে আর্থিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

একজন শিল্প সূত্র Moneycontrol-কে জানিয়েছেন, “নতুন নিয়ম অনুযায়ী ঋণদাতাদের ঋণ বিতরণের আগে অনেক বেশি বিশদ আকারে যাচাই করতে হবে, যা বর্তমানে অনেক সহজ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।”

Advertisements

ক্রিসিল (Crisil)-এর সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট বলছে, খসড়া নিয়মাবলির ফলে সোনার ঋণ-ভিত্তিক এনবিএফসিগুলির বৃদ্ধি ধীর হতে পারে। ক্রিসিল রেটিংসের ডিরেক্টর মালবিকা ভোটিকা বলেন, “ঋণের মূল্য ও সোনার মূল্য অনুপাত (LTV) সংক্রান্ত দিকনির্দেশ এবং সেই অনুপাতে ব্যত্যয় ঘটলে যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তা ঋণ বিতরণের পরিমাণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে সংস্থাগুলিকে। এর ফলে সোনার ঋণ সংস্থাগুলির বৃদ্ধির গতি ব্যাহত হতে পারে।”

মুথুট ফিনান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জর্জ আলেকজান্ডার মুথুট বলেন, “সোনার দাম গত এক বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং সেই কারণেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়েছে। পাশাপাশি, এই খাতে নতুন খেলোয়াড়দের প্রবেশও আরবিআই-এর নজর কেড়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা FY25-এ সোনার ঋণে ১ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনার সীমা অতিক্রম করেছি এবং ভবিষ্যতেও দৃঢ় বৃদ্ধির আশা রাখি।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আরবিআই-এর লক্ষ্য ঋণদাতাদের আরও দায়িত্বশীল করে তোলা এবং গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তবে এই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে যদি ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা সমস্যায় পড়েন, তাহলে সমাজের একটি বড় অংশ আর্থিক পরিষেবার বাইরে চলে যেতে পারে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যকে ব্যাহত করবে।

সার্বিকভাবে, সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংক একযোগে কাজ করছে যাতে সোনার ঋণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বজায় থাকে, কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়াতে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে। খসড়া নিয়মাবলি বাস্তবায়নের আগে ফিল্ড লেভেল থেকে প্রাপ্ত মতামত ও অভিজ্ঞতাও বিবেচনা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এখন দেখার বিষয়, আরবিআই কতটা দ্রুত এবং কীভাবে এই খসড়া নির্দেশিকার চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করে এবং তা কীভাবে সোনার ঋণ শিল্পে প্রভাব ফেলে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—ছোট ঋণগ্রহীতাদের সুরক্ষায় সরকার সদা সতর্ক এবং সক্রিয়।