HomeBusinessRBI–র নতুন নীতিতে বদল আসছে দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থায়

RBI–র নতুন নীতিতে বদল আসছে দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থায়

নতুন নীতি গ্রাহকের সুরক্ষা বাড়াবে, ফিনটেক–ব্যাংক হবে আরও স্বচ্ছ

- Advertisement -

ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) নতুন ক্রেডিট কার্ড নীতিমালা। ডিজিটাল পেমেন্ট বাড়ছে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর ফিনটেক ও ব্যাংকগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের সুরক্ষা, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থাপনাকে সামনে রেখে RBI নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে কোটি কোটি ভারতীয় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর ওপর।

নতুন নীতিমালার ফলে কার্ডের লিমিট কীভাবে বদলাবে, বিলিং সিস্টেমে কী পরিবর্তন আসবে, EMI–র নিয়ম কী রকম হবে এসব বিষয়ে এখন গ্রাহকদের মধ্যে অনেক প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ততা রোধ, স্বচ্ছ সুদ হিসাব নিশ্চিত করা, এবং কার্ড জালিয়াতি ও অতিরিক্ত চার্জ বন্ধ করা।

   

প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে গ্রাহকের সম্মতি বাধ্যতামূলক। আগে অনেক ব্যাংক ও কার্ড ইস্যুকারী কোম্পানি নিজেরাই ক্রেডিট লিমিট বাড়িয়ে দিত বা কমিয়ে দিত, ব্যবহারকারীকে শুধু একটি SMS পাঠানো হতো। এখন থেকে এই পদ্ধতি বন্ধ। গ্রাহক না বললে লিমিট পরিবর্তন করা যাবে না। এর ফলে ব্যবহারকারীরা অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি থেকে বাঁচবেন, কারণ অনেক সময় লিমিট বাড়লে খরচও বেড়ে যায়।

দ্বিতীয় বড় পরিবর্তন হল কার্ড বন্ধ করার নতুন নিয়ম। যেসব গ্রাহক ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন না, সেই কার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেবে ব্যাংক। তবে তার আগে ৩০ দিন আগে নোটিশ পাঠাতে হবে। এই নিয়ম মূলত সাইবার নিরাপত্তা ও কার্ড জালিয়াতি ঠেকানোর উদ্দেশ্যে আনা হয়েছে। ব্যবহার না হওয়া কার্ড অনেক সময় হ্যাকারদের টার্গেট হয়ে যায়।

তৃতীয় পরিবর্তন এসেছে বিলিং সাইকেল নিয়ে। এখন অনেকেই অভিযোগ করেন, বিলিং তারিখ অসুবিধাজনক হওয়ায় EMI বা পেমেন্ট সামলাতে সমস্যা হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, গ্রাহকরা বছরে একবার নিজেদের উপযোগী বিলিং তারিখ নিজেরাই বেছে নিতে পারবেন। এতে বেতন, EMI, বিল পেমেন্ট সবকিছু ব্যালান্স করা সহজ হবে।

চতুর্থ পরিবর্তন হলো ইন্টারেস্ট ও চার্জের স্বচ্ছ হিসাব। RBI নির্দেশ দিয়েছে যে—

  • কার্ড কোম্পানিকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে কত সুদ কবে থেকে লাগছে
  • Late fee, over-limit fee, cash withdrawal fee- সব আলাদা করে ভেঙে দেখাতে হবে
  • অস্পষ্ট বা লুকানো চার্জ নেওয়া যাবে না

এতে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত চার্জ চাপানো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে।

পঞ্চম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে EMI কনভার্শন নিয়ে। এখন থেকে 

  • EMI–তে রূপান্তরের আগে গ্রাহকের সুস্পষ্ট সম্মতি প্রয়োজন
  • যে সুদ নেওয়া হবে সেটাও আগে জানাতে হবে
  • EMI চার্জ কখনোই প্রধান ক্রেডিট লিমিটের ৫%–এর বেশি ব্লক করতে পারবে না

এর ফলে EMI–র ফাঁদে পড়ে গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে। অনেক সময় EMI নেওয়ার পর দেখা যায় লিমিট কমে গেছে, লেনদেন করতে সমস্যা হচ্ছে, এখন থেকে এই সমস্যা কমবে।

আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে রিওয়ার্ড পয়েন্ট নীতিতে।
অনেক ব্যাংক রিওয়ার্ড পয়েন্ট কেটে নিত বা অঘোষিতভাবে মেয়াদ শেষ করে দিত। এখন থেকে—

  • রিওয়ার্ড পয়েন্টের মেয়াদ অন্তত ৩ বছর হতে হবে
  • কোন পরিস্থিতিতে পয়েন্ট বাতিল হবে তা আগেই জানাতে হবে
  • কো-ব্র্যান্ডেড কার্ডের ক্ষেত্রে দুই পক্ষকেই একসঙ্গে নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে

গ্রাহকদের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির খবর।

ফ্রড প্রতিরোধেও RBI আরও কঠোর হচ্ছে।

  • কার্ড হারালে বা চুরি হলে, গ্রাহক অভিযোগ জানালেই সঙ্গে সঙ্গে কার্ড ব্লক করতে হবে
  • গ্রাহককে fraud liability protection দিতে হবে
  • অননুমোদিত লেনদেনের দায় গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না

সাইবার অপরাধ বাড়ার কারণে এই নিয়ম অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

তবে সব পরিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে যা, তা হলো—কার্ড ইস্যুর কঠোর প্রক্রিয়া। এখন থেকে কার্ড ইস্যুর আগে ব্যাংক বা ফিনটেক কোম্পানিকে গ্রাহকের আয়, খরচাচালি, ক্রেডিট স্কোর এবং দেনার পরিমাণ খুঁটিয়ে দেখতে হবে। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ লোন বা “easy card approval” কমে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুবসমাজ অতিরিক্ত ক্রেডিট ব্যবহার করছে, বহুজন নিজেদের আয়ের তুলনায় বেশি কার্ড ব্যবহার করছে। এই অবস্থায় RBI–র নতুন নীতি গ্রাহককে আর্থিকভাবে সচেতন হতে সাহায্য করবে।

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সালের RBI–র নতুন ক্রেডিট কার্ড নীতি একদিকে গ্রাহকের সুরক্ষা বাড়াবে, অন্যদিকে ব্যাংক ও ফিনটেক কোম্পানিকে আরও দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করবে। ফিনান্সিয়াল ডিসিপ্লিন বাড়বে, জালিয়াতি কমবে, এবং ক্রেডিট ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়বে—এটাই এই নীতির মূল লক্ষ্য।

- Advertisement -
Business Desk
Business Desk
Stay informed about the latest business news and updates from Kolkata and West Bengal on Kolkata 24×7
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular