আগামী ৪-৬ আগস্ট ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (RBI) দ্বিমাসিক মনেটারি পলিসি রিভিউ সভা। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এই বৈঠকে সুদের হারে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কেয়ারএজ রেটিংস (CareEdge Ratings) জানিয়েছে, রিজার্ভ ব্যাংক ইতিমধ্যেই মুদ্রানীতিতে ছাড়ের পথ বেছে নিয়ে আগেভাগেই সুদের হার কমিয়েছে এবং এখন বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অর্থনীতি এখনও পর্যবেক্ষণে, কাটার সম্ভাবনা কম:
সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের (ANI) রিপোর্ট অনুযায়ী, রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার না কমানোর পক্ষেই থাকতে পারে, যদি না ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি হঠাৎ করেই উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়ে। কেয়ারএজ জানিয়েছে, “বর্তমানে অর্থনীতির অবস্থা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপেক্ষা করে দেখতে পারে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (reciprocal tariff) ইস্যুতে যদি অনিশ্চয়তা বজায় থাকে, তবে রিজার্ভ ব্যাংক সতর্ক থাকবেই।”
মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যে নজর, পূর্ণ ট্রান্সমিশন এখনও হয়নি:
মুদ্রানীতি পূর্ব পর্যালোচনায় কেয়ারএজ রেটিংস জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির পথে নজর রাখছে রিজার্ভ ব্যাংক। তাদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে গ্রাহক মূল্য সূচক ভিত্তিক (CPI) খুচরো মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশ ছাড়াতে পারে এবং ২০২৬-২৭ সালে গড়ে তা ৪.৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে রেপো রেট অপরিবর্তিত থাকলে রিয়েল পলিসি রেট দাঁড়াবে ১ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে।
কেয়ারএজ বলছে, “এই পরিস্থিতিতে রেপো রেটে আবার কাটার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং, পূর্ববর্তী রেট কমানোর প্রভাব যাতে সিস্টেমে পুরোপুরি কার্যকর হয়, সেই সময় দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”
তাদের মতে, রিজার্ভ ব্যাংক যথেষ্ট পরিমাণে তরলতা (liquidity) প্রদান করেছে এবং রেট কমানোয় আগেই পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে এখন মুদ্রানীতি কমিটি (MPC) সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি কমলেও বৈশ্বিক ঝুঁকি রয়ে গেছে:
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে খাদ্যদ্রব্যের দামের স্থিতিশীলতার ফলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কেয়ারএজ জানিয়েছে, আগামী দুই ত্রৈমাসিকে মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে ঝুঁকি একেবারে নেই। বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে।
তবে কেয়ারএজ মনে করে, ভারতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পণ্য রফতানির অংশ (merchandise trade exposure) তুলনামূলকভাবে কম। তাই সম্ভাব্য পাল্টা শুল্কের প্রভাবও সীমিত থাকবে।
আগেই কমেছে রেপো রেট ১০০ বেসিস পয়েন্ট:
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রিজার্ভ ব্যাংক মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে। গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা আগেই বলেছিলেন, অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেয়ারএজ বলছে, “এই আগেভাগেই কমানো সুদের হারের কারণে এখন আর অতিরিক্ত ছাড় দেওয়ার তেমন জায়গা নেই।”
সবদিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাংক এবার সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেই পরিস্থিতি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মূল্যস্ফীতি এখনও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মার্কিন শুল্ক নীতির মতো বিষয়গুলো RBI-কে এখনই কোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখবে।
কেয়ারএজ রেটিংস-এর মতে, অর্থনীতির সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে এটি একটি ‘সতর্ক বিরতি’ (cautious pause)। আগামী কিছু মাসের মধ্যে যদি বাজারে সুস্পষ্ট কোনো পরিবর্তন না আসে, তাহলে RBI-এর এই স্ট্যাটাস কো-ই এখন মূল মুদ্রানীতির অংশ হয়ে থাকবে।