রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) আগামী ৪–৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সুদের হার কমাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। রয়টার্স পরিচালিত একটি অর্থনীতিবিদদের জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে। এই নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সুদের হার কমানোর পথে হাঁটতে পারে আরবিআই।
জরিপে অংশ নেওয়া ৬১ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৫৩ জন মনে করছেন, জুন মাসে আরবিআই রেপো রেট কমিয়ে ৫.৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনবে। দুই জন আরও বড়, ৫০ বেসিস পয়েন্টের কাট আশা করছেন। অপরদিকে ছয় জন অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, জুনে আরবিআই কোনো পরিবর্তন আনবে না।
ধীরগতির অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক ঝুঁকি
ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ৬.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যেখানে এর আগের বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে।
বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি আরবিআইয়ের ৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার নিচে অবস্থান করছে, ফলে মুদ্রানীতি শিথিল করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর দিকে ঝুঁকছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভারতের জন্যও হুমকি।
এএনজেড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ধীরজ নিম বলেন, “বাণিজ্য উত্তেজনা বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য নেতিবাচক এবং এর প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতেও পড়বে। যদি ঘরোয়া মুদ্রাস্ফীতি কোনো সমস্যা না হয়, তবে এই ঝুঁকিগুলোকে মোকাবেলার জন্য আরবিআইয়ের পক্ষ থেকে আরও শক্তিশালী নীতিগত পদক্ষেপ আশা করা যায়।”
তিনি আশা করছেন, জুনের বৈঠকের পরও আরবিআই আরও দুটি হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আগ্রাসী হার কমানোর সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা ব্যর্থ হলে, আরবিআই পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হারে সুদের হার কমাতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও চলমান মুদ্রানীতিগত শিথিলকরণ একটি স্বল্প সময়ের চক্রে সীমাবদ্ধ থাকছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদি মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত হার কমানো হয়, তাহলে এটিই হবে গত এক দশকে আরবিআইয়ের সবচেয়ে ছোট ও সীমিত হার কমানোর ধারা।
আগস্টে আরেক দফা হ্রাসের সম্ভাবনা
আগস্ট মাসে আরও একটি হার কমানো হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৮ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৪৭ জন মনে করছেন, আগস্ট নাগাদ রেপো রেট আরও কমে ৫.৫০ শতাংশে নামতে পারে। আগের মাসের জরিপে এই সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম, অর্থাৎ রেট হ্রাসের পক্ষে কনসেনসাস বাড়ছে।
শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ধারার আশা
একই সময়ে করা আরেকটি রয়টার্স জরিপে বলা হয়েছে, উচ্চ মূল্যায়ন (valuation) নিয়ে কিছু উদ্বেগ থাকলেও ভারতীয় শেয়ারবাজার শক্তিশালী থাকবে এবং ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সূচকগুলো নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্রও ইতিবাচক। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬.৩ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং ২০২৬ সালে তা বেড়ে ৬.৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
নীতি হ্রাসের প্রভাব এখনো অস্পষ্ট
তবে চ্যালেঞ্জ একেবারে নেই তা নয়। ইয়েস ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রনীল প্যান জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে করা সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত ব্যাংক ঋণের উপর খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।
তিনি বলেন, “তারল্য সংকটের কারণে ঋণের সুদের হার তেমন কমেনি। যদিও আমানতের ওপর সুদের হার কমেছে, তবে এটা কার্যকর নীতির প্রতিফলন, না কি ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।”
আগামী জুন মাসের আরবিআই বৈঠকটি ভারতের অর্থনীতি ও বাজারের দৃষ্টিকোণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। মুদ্রাস্ফীতির নিচু মাত্রা ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মাঝে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক গতি নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেপো রেট কমানোর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও আর্থিক নীতিতে সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যাতে মুদ্রানীতির প্রভাব বাস্তব খাতে পৌঁছাতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আগামী সপ্তাহে আরবিআই ঠিক কোন পথে হাঁটে এবং তার প্রভাব কীভাবে প্রতিফলিত হয় বাজার ও অর্থনীতিতে।