ভারতীয় ব্যাংকগুলির জন্য স্বস্তির খবর আনল RBI

২০২৫ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI)-এর আক্রমণাত্মক তারল্য সহায়তা পদক্ষেপের ফলে দেশের ব্যাংকগুলিতে কাঠামোগত আমানত চাপের স্পষ্ট হ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্লোবাল ক্রেডিট রেটিং…

Personal Loan, Interest Rates,Top Banks ,Low Interest Loans, India Personal Loans

২০২৫ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI)-এর আক্রমণাত্মক তারল্য সহায়তা পদক্ষেপের ফলে দেশের ব্যাংকগুলিতে কাঠামোগত আমানত চাপের স্পষ্ট হ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্লোবাল ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ রেটিংস এক রিপোর্টে এ কথা জানিয়েছে।

ফিচের মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আরবিআই প্রায় ৫.৬ ট্রিলিয়ন টাকা (যা মোট ব্যাংকিং ব্যবস্থার মোট সম্পদের প্রায় ২ শতাংশ) ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবাহিত করেছে, মূলত সরকারি সিকিউরিটি কেনার মাধ্যমে। এর ফলে মার্চ মাসের পর থেকে দেশে একটি তারল্য উদ্বৃত্ত (liquidity surplus) পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাংকগুলির অর্থায়নের শর্তাবলী উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ হয়েছে। ফিচ রেটিংসের মতে, এই পদক্ষেপগুলি ব্যাংকগুলির জন্য গত এক বছরে তীব্র আমানত সংগ্রহ প্রতিযোগিতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

   

গত এক বছরে ঋণ প্রবৃদ্ধি আমানত সংগ্রহের চেয়ে বেশি হওয়ায়, ব্যাংকগুলির ঋণ-টু-ডিপোজিট অনুপাত (loan-to-deposit ratio) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। ফলে ব্যাংকগুলি নতুন তহবিল আনতে বেশি সুদ দিতে বাধ্য হয়। এই অবস্থার ফলে আমানত সংগ্রহের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছিল।

কিন্তু আরবিআই-এর তারল্য সহজীকরণ নীতি এবং নগদ রিজার্ভ অনুপাত (Cash Reserve Ratio বা CRR) ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্ত এই পরিস্থিতি উল্টে দিয়েছে। ফিচের মতে, ধাপে ধাপে এই সিদ্ধান্ত প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত তারল্য ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবাহিত করবে।

এই অতিরিক্ত তারল্যের ফলে নতুন আমানতের জন্য সুদের হার কমতে শুরু করেছে। যদিও ফিচ FY26 অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৩০ বেসিস পয়েন্টের নিট সুদের মার্জিন (Net Interest Margin বা NIM) সঙ্কোচনের পূর্বাভাস দিয়েছে, কারণ অর্ধেকের বেশি বিদ্যমান ঋণ পুনঃমূল্যায়ন করতে হবে। তবে FY27 অর্থাৎ ২০২৬-২৭ অর্থবছরে পরিস্থিতি পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ফিচ আশা করছে। কারণ তখন আমানতের খরচ আরও কমবে এবং কম CRR এর সুবিধা পুরোপুরি কাজে আসবে।

ফিচের রিপোর্টে FY25 অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ অনুমান করা হয়েছে, যা দেশের প্রাক্কলিত নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধির (৯.৮ শতাংশ) চেয়ে সামান্য বেশি। এটি স্পষ্ট করছে যে ব্যাংকগুলির ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

তবে এই অনুকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও ফিচ সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি আরবিআই ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রার অস্থিরতার কারণে তারল্য টানতে বাধ্য হয়, তবে আবারও ব্যাংকগুলির অর্থায়ন খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মার্জিনের ওপর চাপ বাড়তে পারে।

Advertisements

ফিচ আরও জানিয়েছে, ব্যাংকগুলির ঋণ প্রবৃদ্ধি এবং তারল্য পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করবে। যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হতে পারে, যা ব্যাংকগুলির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলির জন্য ঋণ দেওয়া সহজ হচ্ছে এবং নতুন ঋণপত্রে সুদের হার কম রাখা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে নতুন ব্যবসা এবং শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সহজ ঋণ সুবিধা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

ফিচের মতে, কম তারল্য চাপের ফলে ব্যাংকগুলির উপর ঋণগ্রহীতাদের চাপও কিছুটা কমবে, কারণ আগের তুলনায় কম সুদে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে, সাধারণ আমানতকারীদের জন্য সুদের হার কিছুটা কমতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।

আরবিআই-এর এই তারল্য সহজীকরণের মূল উদ্দেশ্য হল অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে অনেক দেশ মুদ্রাস্ফীতি রোধে কড়া আর্থিক নীতি গ্রহণ করছে, সেখানে ভারতের আরবিআই তুলনামূলকভাবে সহনশীল নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে নীতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে।

ফিচের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব্যাংকগুলির শক্তিশালী মূলধন কাঠামো এবং স্থিতিশীল সম্পদ গুণমান (asset quality) ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে নন-পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং বৈদেশিক বাজারের অস্থিরতা সবসময়ই ঝুঁকির বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, আরবিআই-এর তারল্য সহায়তা পদক্ষেপ ২০২৫ সালে ভারতীয় ব্যাংকগুলির জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে। কম অর্থায়ন খরচ, সহজ ঋণ নীতি এবং বাজারে অতিরিক্ত অর্থপ্রবাহ অর্থনীতিকে গতি দিতে পারে। তবে এই ইতিবাচক চিত্র দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।