রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার নেতৃত্বে মুদ্রানীতি কমিটি (Monetary Policy Committee বা MPC) চলতি পর্যালোচনায় রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরপর তিনবারের হ্রাসের পরে এবার রেপো রেট রাখা হয়েছে ৫.৫ শতাংশেই (rbi keeps repo rate unchanged)। একইসঙ্গে, কমিটি তাদের পূর্বনির্ধারিত “নিরপেক্ষ” নীতিগত অবস্থান বজায় রেখেছে এবং আগামী দিনে অর্থনৈতিক প্রবণতা ও মুদ্রাস্ফীতির গতিপথের উপর নজর রাখার কথা জানিয়েছে।
* রেট স্থিতাবস্থা: কী কী অপরিবর্তিত থাকছে?
* রেপো রেট: ৫.৫%
* স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (SDF): ৫.২৫%
* মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (MSF) ও ব্যাঙ্ক রেট: ৫.৭৫%
এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির কাছে রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার হার যেমন আগের মতোই থাকছে, তেমনই তাদের নগদ রিজার্ভ রাখার (CRR) ক্ষেত্রে জুন মাসে ঘোষিত ১০০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস (চতুর্থাংশে ভাগ করে সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর) অনুসারে বর্তমান হার ৩ শতাংশেই রয়েছে।
আগের তিনটি রেট কাটের পর বিশ্রাম:
চলতি বছর ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল এবং জুনে মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে এবং জুন মাসে ৫০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের মাধ্যমে রেপো রেট নামানো হয়েছে ৬.৫% থেকে ৫.৫%-এ। এখন RBI মনে করছে, এই নীতিগত হ্রাসের প্রভাব এখনও বাজারে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয়নি।
FY26 জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস অপরিবর্তিত:
গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানান, আরবিআই তাদের FY26 অর্থবর্ষের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখে দিয়েছে ৬.৫ শতাংশে। বিস্তারিতভাবে কোয়ার্টার অনুযায়ী প্রবৃদ্ধির হার এভাবে নির্ধারিত হয়েছে:
Q1 (এপ্রিল-জুন): ৬.৫%
Q2 (জুলাই-সেপ্টেম্বর): ৬.৭%
Q3 (অক্টোবর-ডিসেম্বর): ৬.৬%
Q4 (জানুয়ারি-মার্চ): ৬.৩%
সাধারণ মানুষের জন্য এর কী প্রভাব?
আরবিআইয়ের এই ‘স্থিতাবস্থা’ সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষ এবং বাজারে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ।
১. ঋণের উপর প্রভাব:
বর্তমান হারে কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় হোম লোন, পার্সোনাল লোন ও অটো লোনের ইএমআই-তে আপাতত কোনও পরিবর্তন আসবে না।
যাঁরা নতুন ঋণ নিতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রেও সুদের হার একই থাকায় ঋণগ্রহণের খরচ অপরিবর্তিত থাকছে। এতে স্বল্পমেয়াদে ঋণ গ্রহণ অনেকের কাছে এখনও সাশ্রয়ী।
২. ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার:
মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন না হওয়ায় ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের (FD) সুদের হারেও কোনও পরিবর্তন হবে না।
যাঁরা সম্প্রতি এফডি করেছেন বা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য এটি স্বস্তির খবর, কারণ সুদের হার স্থিতিশীল থাকবে।
৩. সঞ্চয় ও বিনিয়োগ:
স্থিতিশীল সুদের হার মানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে এখনও নিরাপত্তা বজায় আছে। ঋণের খরচ না বাড়ায় ব্যবসায়িক খরচের উপরও প্রভাব পড়বে না। এতে মধ্য ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছুটা স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হবে।
RBI-র দৃষ্টিভঙ্গি: সতর্ক নজরদারি চালিয়ে যাওয়া:
গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “নীতিগত হার স্থির রাখার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে ইতিমধ্যে নেওয়া হ্রাসের প্রভাব পুরোপুরি বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা। আমরা ক্রমাগত তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”
তিনি আরও বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার মধ্যে ভারসাম্য রাখাই MPC-র প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে আর্থিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক বাজারের অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে আমরা অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কৌশল নিচ্ছি।”
ভবিষ্যতের দিশা: নজরে আন্তর্জাতিক বাজার ও গৃহস্থালি চাহিদা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম ওঠানামা করছে। ফলে রিজার্ভ ব্যাংক আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ।
সার্বিকভাবে, RBI-র এই মুদ্রানীতির পর্যালোচনায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক বলা যেতে পারে। ঋণ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। যদিও ভবিষ্যতের দিকে সতর্ক নজর রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। RBI নিজেও বলেছে, বাজার পরিস্থিতি ও আর্থিক ডেটার উপর ভিত্তি করেই আগামী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।