রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সম্প্রতি ব্যাংকগুলির তরলতা কাভারেজ রেশিও (LCR) সংক্রান্ত নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং সুবিধাযুক্ত খুচরো ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক আমানতের জন্য অতিরিক্ত ২.৫% তরলতা বাফার নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে ১ এপ্রিল ২০২৬ থেকে।
LCR কি এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
LCR বা Liquidity Coverage Ratio একটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড যা নিশ্চিত করে যে, ব্যাংকগুলির কাছে যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চ-মানের তরল সম্পদ (High-Quality Liquid Assets বা HQLA) রয়েছে যেন তারা ৩০ দিনের একটি স্ট্রেস বা চাপের সময়ে টিকে থাকতে পারে। এই রেশিও ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও গ্রাহক আস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নতুন নির্দেশিকা কী বলছে?
২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত এক সার্কুলারে RBI জানিয়েছে, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং (IMB) সুবিধাযুক্ত খুচরো ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক গ্রাহকদের আমানতের জন্য অতিরিক্ত ২.৫% রান-অফ ফ্যাক্টর আরোপ করা হবে। অর্থাৎ:
- স্থিতিশীল খুচরো আমানত যা IMB সুবিধাযুক্ত, তার জন্য রান-অফ হার হবে ৭.৫% (বর্তমানে ৫%)
- কম স্থিতিশীল খুচরো আমানত যা IMB সুবিধাযুক্ত, তার জন্য রান-অফ হার হবে ১২.৫% (বর্তমানে ১০%)
পুরনো প্রস্তাব থেকে পরিবর্তন
২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত খসড়া নির্দেশিকায় রান-অফ হার ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, অর্থাৎ ১০% ও ১৫% করার কথা ছিল। কিন্তু স্টেকহোল্ডারদের প্রতিক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে তা হ্রাস করা হয়েছে এবং কার্যকর হওয়ার তারিখও এক বছর পিছিয়ে ২০২৬ সালের এপ্রিল করা হয়েছে।
কেন এই পরিবর্তন?
RBI জানিয়েছে, বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিং যেমন UPI, মোবাইল অ্যাপ ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকরা খুব সহজেই অর্থ স্থানান্তর বা উত্তোলন করতে পারেন। আর্থিক চাপের সময়ে এই সুবিধাগুলি হঠাৎ বড় অঙ্কের অর্থের বহিঃপ্রবাহ ঘটাতে পারে, যা ব্যাংকের তরলতা ঝুঁকি বাড়ায়। বিদেশি ব্যাংকিং ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা ও ভারতের দ্রুত ডিজিটাল ব্যাংকিং বিস্তারের কথা মাথায় রেখে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
হ্রাস পেল হোলসেল আমানতের ঝুঁকি শ্রেণিবিন্যাস
RBI আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে হোলসেল ফান্ডিং-এর ক্ষেত্রে। আগে ট্রাস্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পার্টনারশিপ ও LLP-এর আমানতকে ১০০% রান-অফ হারের মধ্যে ধরা হতো। নতুন নির্দেশিকায় এই হার কমিয়ে ৪০% করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলির উপর চাপ কিছুটা কমবে।
প্রভাব কী হতে পারে?
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, RBI অনুমান করছে এই পরিবর্তনের ফলে গোটা ব্যাংকিং খাতে গড় এলসিআর প্রায় ৬ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বর্তমানে ভারতের সব ব্যাংকই LCR-এর ন্যূনতম মানদণ্ড স্বাচ্ছন্দ্যে পূরণ করছে।
RBI-এর বক্তব্য
রিজার্ভ ব্যাংকের উপ-গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রার নেতৃত্বে পরিচালিত পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই পরিবর্তনগুলি চূড়ান্ত হয়েছে। RBI জানিয়েছে, এই নির্দেশিকা ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং যুগের জন্য উপযুক্ত, এবং এটি বৈশ্বিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
এই পরিবর্তনের মাধ্যমে, RBI একদিকে যেমন ব্যাংকের তরলতা নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছে যাতে ব্যাংকগুলি তাদের পরিকাঠামো ও কৌশলগত পরিকল্পনা নতুন নিয়ম অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারে। ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ঝুঁকি মূল্যায়ন ও পরিচালনায় এই নির্দেশিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই নির্দেশিকা কার্যকর হলে গ্রাহক, ব্যাংক এবং নিয়ন্ত্রক – সকল পক্ষের স্বার্থই সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা করা যায়।