ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আন্ডাররাইটিং নিলামের ফলাফল ঘোষণা করেছে। এই নিলামে সরকার কর্তৃক ইস্যু করা দুটি দীর্ঘমেয়াদি বন্ড বা সরকারি সিকিউরিটির জন্য প্রাইমারি ডিলারদের কাছ থেকে আন্ডাররাইটিং প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি বন্ড ২০৩০ সালে এবং অপরটি ২০৫৫ সালে পরিপক্ক হবে।
২০৩০ সালে পরিপক্ক হওয়া সরকারি বন্ড
৬.০১ শতাংশ সুদের হারে ২০৩০ সালে মেয়াদপূর্তির এই সরকারি সিকিউরিটির (GS) জন্য মোট নোটিফায়েড অঙ্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫,০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যূনতম আন্ডাররাইটিং প্রতিশ্রুতি (MUC) দাঁড়ায় ৭,৫১৮ কোটি টাকা। প্রতিযোগিতামূলক নিলামে গৃহীত অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি (ACU) ছিল ৭,৪৮২ কোটি টাকা। ফলে, সর্বমোট আন্ডাররাইটিং গিয়ে দাঁড়ায় সম্পূর্ণ নোটিফায়েড অঙ্ক অর্থাৎ ১৫,০০০ কোটি টাকাতেই। এই ক্ষেত্রে আন্ডাররাইটিং কমিশনের কাট-অফ হার নির্ধারণ করা হয় প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ০.৪৯ পয়সা।
২০৫৫ সালে পরিপক্ক হওয়া সরকারি বন্ড RBI government securities
অন্যদিকে, ৭.২৪ শতাংশ সুদের হারে ২০৫৫ সালে মেয়াদপূর্তির সরকারি সিকিউরিটির (GS) জন্য নোটিফায়েড অঙ্ক ছিল ১৩,০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যূনতম আন্ডাররাইটিং প্রতিশ্রুতি (MUC) দাঁড়ায় ৬,৫১০ কোটি টাকা, এবং প্রতিযোগিতামূলক নিলামে গৃহীত অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি (ACU) ছিল ৬,৪৯০ কোটি টাকা। ফলে এখানেও সম্পূর্ণ ১৩,০০০ কোটি টাকা আন্ডাররাইট করা হয়। এই সিকিউরিটির কাট-অফ কমিশন হার নির্ধারণ হয়েছে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ০.৭০ পয়সা।
অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক আন্ডাররাইটিং (ACU) পদ্ধতি
আরবিআই জানিয়েছে, এই নিলামটি অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যাডিশনাল কম্পিটিটিভ আন্ডাররাইটিং (ACU) ব্যবস্থার অধীনে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নিশ্চিত করে যে সরকারি সিকিউরিটির প্রাথমিক নিলামে পর্যাপ্ত বিড না আসলেও সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন হয়ে যাবে। প্রাইমারি ডিলারদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারের ঋণ কর্মসূচির একটি অংশ আন্ডাররাইট করতে হয়। এর বিপরীতে তারা কমিশন পায়, যা প্রতিযোগিতামূলক নিলামের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
বাজারে আস্থা ও স্থিতিশীলতা
আন্ডাররাইটিং প্রক্রিয়া ভারতের ঋণ বাজার পরিচালনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারের বার্ষিক ঋণ কর্মসূচি যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং বাজারে কোনো ধরণের অনিশ্চয়তা না তৈরি হয়, তা নিশ্চিত করতেই আরবিআই এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত থাকে যে সরকারি ঋণ তোলার প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হবে না।
প্রাইমারি ডিলারদের ভূমিকা
এই নিলামে অংশগ্রহণকারী প্রাইমারি ডিলাররা হলেন আরবিআই অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, যাদের দায়িত্ব সরকারের বন্ড ক্রয় ও বিক্রির প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। আন্ডাররাইটিং বাধ্যবাধকতা নেওয়ার মাধ্যমে তারা কার্যত সরকারের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করে। এর বিনিময়ে তারা যে কমিশন পায়, সেটিই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। কাট-অফ কমিশন হার মূলত সেই সর্বোচ্চ হারের প্রতিফলন, যেটিতে আন্ডাররাইটিং দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাজারের আগ্রহ এবং ঝুঁকি মূল্যায়নের একটি সূচক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
সরকারি লোন কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য
প্রতিবারের মতোই এই আন্ডাররাইটিং নিলামটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সরকারের নির্ধারিত বাজার লোন কর্মসূচির সময়সূচি অনুযায়ী। সরকারি বন্ড ইস্যু একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা অর্থনীতির প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের একটি অন্যতম উপায়। এই প্রক্রিয়াকে নির্বিঘ্ন রাখতে আরবিআইয়ের এই নিলাম কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
১২ সেপ্টেম্বরের এই নিলামের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো যে, ভারতের ঋণ বাজারে আন্ডাররাইটিং ব্যবস্থা সরকারের জন্য একটি সুরক্ষার পরিকাঠামো তৈরি করে। ২০৩০ ও ২০৫৫ সালের সরকারি বন্ড দুটির সম্পূর্ণ আন্ডাররাইটিং সম্পন্ন হওয়ায় সরকারের ঋণ সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় কোনো ঝুঁকি থাকছে না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক কমিশন হারের মাধ্যমে বাজারের স্বচ্ছতাও বজায় থাকছে।
Business: The Reserve Bank of India (RBI) has released the results of its underwriting auction for two government securities maturing in 2030 and 2055. The auction ensured full subscription of the bonds, with competitive commission rates for primary dealers.