সোনা সংরক্ষণে নয়া মাইলফলক ভারতের

rbi-gold-reserve-crosses-100-billion-historic-milestone-2025

নয়াদিল্লি: ভারতের অর্থনীতির ইতিহাসে নতুন মাইলফলক রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর স্বর্ণ সংরক্ষণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। ১০ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহে আরবিআই-এর স্বর্ণের মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২.৩৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের প্রায় ১৪.৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি শুধু একটি সংখ্যার খেলা নয়; বরং ভারতের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্ববাজারে আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

Advertisements

আরবিআই-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওই সপ্তাহে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ সামান্য ২.১৮ বিলিয়ন ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯৭.৭৮৪ বিলিয়ন ডলারে। এর মূল কারণ রুপির মান স্থিতিশীল রাখতে আরবিআই-এর ডলার বিক্রি। কিন্তু সেই ক্ষতিকে কার্যত পূরণ করেছে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধি। বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতের রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মোট মূল্যও লাফিয়ে উঠেছে।

ঘানার এই ফুটবলারকে দলে টানল রাজস্থান ইউনাইটেড

বিশ্ব স্বর্ণ কাউন্সিলের ভারত বিভাগের গবেষক কবিতা চ্যাকো জানিয়েছেন, “২০২৫ সালে স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলার নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা।”

২০১৫ সালে যেখানে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে স্বর্ণের অংশ ছিল ৭ শতাংশেরও কম, এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধির কৃতিত্ব আরবিআই-এর দূরদর্শী ক্রয়নীতির। ২০২৪ সালে প্রায় প্রতি মাসেই স্বর্ণ ক্রয় করেছে আরবিআই, যদিও ২০২৫-এর প্রথম নয় মাসে সেই হার কিছুটা কমে এসেছে। মাত্র চার মাসে ৪ টন স্বর্ণ কেনা হয়েছে। যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ৫০ টন। কিন্তু বিশ্বব্যাপি দামের উত্থান এই সীমিত ক্রয়কেও ঐতিহাসিক সাফল্যে পরিণত করেছে।

বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এই অর্জনের তাৎপর্য আরও গভীর। মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি ও সুদের অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী স্বর্ণকে ‘নিরাপদ সম্পদ’ হিসেবে পুনরায় সামনে এনেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৪,৩১৯ ডলারে পৌঁছেছে যা এক বছরের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

Advertisements

ফলে ভারতের হাতে থাকা স্বর্ণের আর্থিক মূল্য অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আইএমএফ ২০২৫ সম্মেলনে আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “ভারতের বৈদেশিক সংরক্ষণ পর্যাপ্ত এবং সুষম। বিশ্বব্যাপী স্বর্ণ সঞ্চয়ের প্রবণতা উদ্বেগের নয়, বরং ভারসাম্যপূর্ণ বিনিয়োগ কৌশলের অংশ।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই অর্জন ভারতের অর্থনীতিকে তিনভাবে শক্তিশালী করেছে। প্রথমত, এটি বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে, যা রুপির মানকে স্থিতিশীল রাখে। দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার মধ্যেও স্বর্ণ ভারতকে ‘নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। তৃতীয়ত, এটি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে, বিশেষত উৎসবের মরশুমে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে।

তবে সবকিছুই ইতিবাচক নয়। স্বর্ণের দামের অস্থিরতা ভবিষ্যতে সংরক্ষণের মোট মূল্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া আরবিআই-এর সাম্প্রতিক কম ক্রয় নীতি নিয়ে কিছু অর্থনীতিবিদ প্রশ্ন তুলছেন এটি কি দীর্ঘমেয়াদে সঠিক কৌশল? অনেকের মতে, আরবিআইকে স্বর্ণের পাশাপাশি অন্যান্য সম্পদেও বিনিয়োগ বৈচিত্র্য বজায় রাখতে হবে।

এই সাফল্যের আবহে দীপাবলির আগে স্বর্ণ ক্রয়ের উৎসাহও নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, উৎসবের মৌসুমে এই খবর স্বর্ণের খুচরো বিক্রিতে অতিরিক্ত গতি আনবে। সমগ্র প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, এই ঐতিহাসিক মাইলফলক ভারতের আর্থিক স্থিতিস্থাপকতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।

যখন বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল, তখন ভারতের স্বর্ণভাণ্ডার যেন এক নির্ভরতার আলোকবর্তিকা। আগামী দিনে এই ধারা বজায় থাকলে ভারত বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণধারী দেশগুলির একটিতে পরিণত হতে পারে আত্মবিশ্বাসী, সুরক্ষিত এবং আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী।