ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) সম্প্রতি স্বর্ণ ও রূপা বন্ধক ঋণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে, যা দেশের সমস্ত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে (Regulated Entities – REs) প্রযোজ্য হবে। এই নতুন নিয়মাবলি ঋণগ্রহীতাদের সুরক্ষা, ঋণ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সঠিক মূল্যায়নের উপর জোর দিয়েছে।
এই নতুন নির্দেশিকাগুলি প্রযোজ্য হবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক (পেমেন্ট ব্যাঙ্ক ছাড়া), সমবায় ব্যাঙ্ক (আরবান, স্টেট ও সেন্ট্রাল), নন-ব্যাংকিং ফিনান্স কোম্পানি (NBFC) এবং হাউজিং ফিনান্স কোম্পানিগুলির (HFC) ওপর।
কী কী বদল এসেছে?
RBI-এর ডেপুটি গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রা এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, ছোট অঙ্কের স্বর্ণঋণের জন্য লোন-টু-ভ্যালু (LTV) রেশিও বাড়িয়ে ৮৫% করা হয়েছে, যেখানে আগে এটি ৭৫% ছিল। অর্থাৎ, এখন স্বর্ণের মোট মূল্যের ৮৫% পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। তবে এই অনুপাত ঋণের মেয়াদ জুড়েই বজায় রাখতে হবে।
বন্ধক হিসাবে কী গ্রহণযোগ্য?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কেবলমাত্র গহনা, অলঙ্কার এবং কয়েন বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়া যাবে। বুলিয়ন (primary gold/silver) বা গোল্ড ETF/মিউচুয়াল ফান্ডের বিরুদ্ধে কোনও ঋণ অনুমোদিত নয়।
মূল্যায়নের নতুন নিয়ম
গহনার মূল্যায়ন করা হবে ৩০ দিনের গড় বাজারদর বা আগের দিনের বাজারদরের (যেটা কম হবে) ভিত্তিতে। মূল্য নির্ধারণ করা হবে গহনার বিশুদ্ধতার ওপর ভিত্তি করে, যা ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (IBJA) অথবা SEBI অনুমোদিত এক্সচেঞ্জের প্রকাশিত মূল্যের মাধ্যমে হবে।
জেমস স্টোন বা অন্যান্য অমূল্য পাথরের মূল্য গণনায় ধরা হবে না, শুধু ধাতব মূল্যই বিবেচিত হবে। মূল্যায়নের সময় ঋণগ্রহীতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক এবং সেই অনুযায়ী একটি অ্যাসে সার্টিফিকেট প্রদান ও সংরক্ষণ করতে হবে।
ঋণ চুক্তিতে কী কী থাকবে?
ঋণচুক্তিতে স্পষ্টভাবে নিলামের নিয়মাবলি, ব্যয় ও সময়সীমা উল্লেখ থাকতে হবে। ঋণগ্রহীতা যেন পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কী ধরনের ঋণ নেওয়া যাবে?
এই বন্ধক ঋণ ব্যবহার করা যাবে ব্যক্তিগত খরচ বা আয়মুখী কাজে। তবে খরচের উদ্দেশ্যে নেওয়া বুলেট ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে।
বন্ধক কীভাবে রাখা ও ফেরত দেওয়া হবে?
ব্যাঙ্ক বা NBFC গুলি গহনা নিজেদের নিরাপদ শাখা বা শাখা পরিচালিত গুদামে সংরক্ষণ করবে। ঋণ মেটানোর পর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে গহনা ফেরত দিতে হবে। দেরি হলে প্রতিদিনের জন্য ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য হবে।
যদি কোনও কারণে গহনা হারিয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই গহনা সম্পূর্ণ মেরামত বা প্রতিস্থাপন করার বিধান রয়েছে।
অতিরিক্ত নিয়মাবলি
- ভুলভাল বা বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- KYC এবং AML (Anti-Money Laundering) নীতিমালা বাধ্যতামূলক।
- দুই বছরের বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত বন্ধক থাকলে, তা ছয় মাস অন্তর রিপোর্ট করতে হবে।
ঋণের সীমা:
ব্যক্তিপ্রতি ঋণের সীমা সর্বাধিক ১ কেজি স্বর্ণ অলঙ্কার এবং ৫০ গ্রাম স্বর্ণ বা রূপার কয়েন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে।
সাধারণ মানুষের জন্য এর প্রভাব:
এই নতুন নিয়মাবলি একদিকে যেমন ঋণ গ্রহণের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে, অন্যদিকে ঋণগ্রহীতারা আরও উপকৃত হবেন, কারণ গহনার সঠিক মূল্য পাওয়া এবং ফেরতের নিশ্চয়তা এখন আরও বেশি নিশ্চিত হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ঋণ ব্যবস্থার সার্বিক সংস্কার নয়, বরং দেশের গ্রাম ও শহরের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ, যারা প্রয়োজনে গহনা বন্ধক রেখে ঋণ নেন, তাঁদের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির বিষয়।
এটি ভবিষ্যতে স্বর্ণঋণ সেক্টরের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়াবে বলেই আশা করা যায়।