রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সম্প্রতি হঠাৎ করেই লখনউ-ভিত্তিক HCBL কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করেছে। মূলত পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব ও আর্থিক স্থিতিশীলতার ঘাটতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কটি ১৯ মে, সোমবার থেকে সমস্ত ব্যাঙ্কিং কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে।
RBI-এর বিবৃতি ও কারণ ব্যাখ্যা
RBI জানিয়েছে, HCBL কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক দীর্ঘদিন ধরে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৯ অনুযায়ী একাধিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা মানতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাঙ্কটির আর্থিক কাঠামো এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যেখানে তা আর গ্রাহকদের স্বার্থে কার্যকর ছিল না। ব্যাঙ্কটির পর্যাপ্ত মূলধন ছিল না এবং কার্যকর নগদ প্রবাহ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, এটি দেউলিয়াত্বের পথে এগোচ্ছিল এবং গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন কমছিল।
বন্ধ ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ও তরলীকরণ প্রক্রিয়া
আরবিআই উত্তর প্রদেশের কো-অপারেটিভ কমিশনার ও রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ করেছে ব্যাঙ্কটির তরলীকরণ (liquidation) প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং একজন তরলীকরণ কর্তাকে নিয়োগ করতে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে ব্যাঙ্কটির সমস্ত সম্পদ ও দেনার হিসাব নিকাশ হবে এবং সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে যতটা সম্ভব গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এই ব্যাঙ্কের গ্রাহকরা এখন আর জমা রাখতে, তুলতে বা চেক ক্লিয়ার করাতে পারবেন না। HCBL Co-operative Bank-এর সমস্ত কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
DICGC-এর বিমা কাভারেজ ও গ্রাহকদের স্বস্তি
এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের একমাত্র ভরসা হল Deposit Insurance and Credit Guarantee Corporation (DICGC)-এর বিমা কাভারেজ। প্রতিটি গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমা দেওয়া হবে, যা জমা ও সুদের মোট অঙ্ককে অন্তর্ভুক্ত করে।
আরবিআই আশ্বস্ত করেছে যে, এই বিমা পরিকল্পনার অধীনে ৯৮.৬৯% গ্রাহক সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন। এখন পর্যন্ত DICGC মোট ২১.২৪ কোটি টাকা বিমার অর্থ হিসাবে বিতরণ করেছে, যা এই ব্যাঙ্কের বিমাকৃত মোট আমানতের অংশ।
তবে এখানে উল্লেখযোগ্য যে, একজন গ্রাহকের একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকলেও সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্তই বিমা প্রদান করা হবে। অর্থাৎ, কারও জমা যদি ১০ লক্ষ বা তার বেশি হয়, তবুও তিনি শুধুমাত্র ৫ লক্ষ টাকাই ফেরত পাবেন।
আরও কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিলের ধারাবাহিকতা:
এই ঘটনাটি একা নয়। সম্প্রতি RBI একাধিক আর্থিকভাবে দুর্বল কো-অপারেটিভ ও আরবান ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, জলন্ধর (২০২৫)
- কালার মার্চেন্টস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, আহমেদাবাদ (২০২৫)
- অজন্তা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক, ঔরঙ্গাবাদ (২০২৫)
- পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক (২০১৯)
এই সব ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেই প্রধান সমস্যা ছিল মূলধনের অভাব, আর্থিক অব্যবস্থাপনা, এবং ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ নীতি। RBI বারংবার সতর্ক করলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলি সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি।
ভবিষ্যতের দিশা ও গ্রাহকদের সতর্কতা:
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে আমানত রাখা গ্রাহকদের জন্য একটি বড় শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আমানতকারীদের আরও সতর্কভাবে ব্যাঙ্ক নির্বাচন করতে হবে এবং ব্যাঙ্কটির আর্থিক স্বাস্থ্য ও RBI-এর পর্যালোচনার দিকগুলো নিয়মিত খতিয়ে দেখতে হবে।
RBI ইতিমধ্যেই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলির উপর নজরদারি আরও কড়া করেছে এবং এদের নিরীক্ষার প্রক্রিয়া কঠোরতর করছে। ব্যাংকিং সেক্টরে স্বচ্ছতা ও গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এরকম পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
HCBL কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল হওয়া শুধু একটি isolated ঘটনা নয়, বরং দেশের আর্থিক নিরাপত্তার বৃহত্তর চিত্রের প্রতিফলন। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের দ্রুত DICGC বিমা দাবির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিজেদের অর্থ ফেরত পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। একইসাথে, সরকার ও RBI-এর পক্ষ থেকে এমন ব্যাঙ্কিং ঝুঁকি মোকাবেলায় আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশা রাখছেন সাধারণ মানুষ।