ঋণগ্রহীতাদের জন্য সুখবর, এত টাকা পর্যন্ত লোনে অতিরিক্ত চার্জ নিষিদ্ধ

rbi-announces-no-excessive-charges-on-loans-up-to-50000-for-borrowers

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে ব্যাঙ্কগুলি প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিং (PSL) বিভাগের অধীনে ছোট ঋণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে যে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রায়োরিটি সেক্টর ঋণের ক্ষেত্রে কোনো ঋণ-সংক্রান্ত, অতিরিক্ত পরিষেবা চার্জ বা পরিদর্শন ফি আদায় করা যাবে না।

Advertisements

এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো ছোট ঋণগ্রহীতাদের অপ্রয়োজনীয় আর্থিক বোঝা থেকে রক্ষা করা এবং ন্যায্য ঋণ প্রথা নিশ্চিত করা। RBI-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রায়োরিটি সেক্টর ঋণের উপর কোনো ঋণ-সংক্রান্ত বা অতিরিক্ত পরিষেবা চার্জ/পরিদর্শন চার্জ আরোপ করা যাবে না।”

RBI প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিং (PSL)-এর জন্য নতুন মাস্টার নির্দেশিকা জারি করেছে, যা ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। এই আপডেটেড নির্দেশিকা ২০২০ সালের PSL নির্দেশিকার বিদ্যমান কাঠামোর স্থলাভিষিক্ত হবে। নতুন নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আরও স্পষ্ট করেছে যে নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC)-দের কাছ থেকে ব্যাঙ্কগুলি সংগ্রহ করা সোনার গহনার বিপরীতে প্রদত্ত ঋণ প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিং বিভাগের আওতায় গণ্য হবে না।

অর্থাৎ, ব্যাঙ্কগুলি এই ধরনের ঋণকে তাদের PSL লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করতে পারবে না। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো প্রায়োরিটি সেক্টরের তহবিল যেন সেই সব ক্ষেত্রে নির্দেশিত হয়, যেখানে প্রকৃত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন—যেমন ছোট ব্যবসা, কৃষি এবং সমাজের দুর্বল অংশ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “NBFC-দের কাছ থেকে ব্যাঙ্কগুলির দ্বারা সংগ্রহ করা সোনার গহনার বিপরীতে প্রদত্ত ঋণ প্রায়োরিটি সেক্টরের জন্য যোগ্য নয়।”

RBI আরও জানিয়েছে, পূর্ববর্তী PSL নির্দেশিকা (২০২০ কাঠামো)-এর অধীনে শ্রেণীবদ্ধ সমস্ত ঋণ তাদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে বিবেচিত হবে। এই সিদ্ধান্ত ঋণগ্রহীতা এবং ব্যাঙ্কগুলির জন্য ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে এবং নতুন নির্দেশিকায় রূপান্তরকে মসৃণ করবে।

PSL লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে আরও ভালো সম্মতি নিশ্চিত করতে, RBI একটি কঠোর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করবে। ব্যাঙ্কগুলিকে এখন তাদের প্রায়োরিটি সেক্টর অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে জমা দিতে হবে। নির্দেশিকা অনুসারে, প্রতি ত্রৈমাসিকের শেষের ১৫ দিনের মধ্যে এবং আর্থিক বছরের শেষের এক মাসের মধ্যে এই তথ্য জমা দিতে হবে। এই পদক্ষেপ PSL বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর জন্য নেওয়া হয়েছে।

যে ব্যাঙ্কগুলি তাদের নির্ধারিত PSL লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হবে, তাদের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (RIDF) এবং নাবার্ড ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা পরিচালিত অন্যান্য আর্থিক প্রকল্পে অবদান রাখতে হবে। এর ফলে ব্যাঙ্কগুলি সরাসরি ঋণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা পূরণ না করলেও আর্থিক অবদানের মাধ্যমে প্রায়োরিটি সেক্টরের উন্নয়নে সহায়তা করবে।

Advertisements

RBI আরও নিশ্চিত করেছে যে কোভিড-১৯ ত্রাণ ব্যবস্থার অধীনে প্রদত্ত বিশেষ ঋণগুলি তাদের বকেয়া থাকা অবস্থায় প্রায়োরিটি সেক্টর লেন্ডিং হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হতে থাকবে। এই সিদ্ধান্ত মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করা ক্ষেত্রগুলিকে সমর্থন করার জন্য নেওয়া হয়েছে।

এই নতুন PSL নির্দেশিকার মাধ্যমে RBI আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং উন্নয়নমূলক লক্ষ্যগুলিকে উৎসাহিত করতে চায়। যে সব ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন, সেগুলি যথাযথ সমর্থন পায় তা নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শক্তিশালী করার দিকে কাজ করছে। আপডেটেড পিএসএল কাঠামো RBI-এর ন্যায্য ঋণ প্রথা নিশ্চিত করার এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলিতে ঋণ নির্দেশ করার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।

৫৮,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণে অতিরিক্ত চার্জ বন্ধের সিদ্ধান্ত ছোট ব্যবসায়ী, কৃষক এবং দুর্বল শ্রেণির মানুষের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে। এই শ্রেণির ঋণগ্রহীতারা প্রায়ই অতিরিক্ত ফি-এর কারণে আর্থিক চাপের মুখে পড়তেন। RBI-এর এই নির্দেশ তাদের সুরক্ষা দেবে এবং ঋণ গ্রহণকে আরও সাশ্রয়ী করবে।

সোনার ঋণে নতুন নিয়ম:
সোনার গহনার বিপরীতে NBFC থেকে সংগ্রহ করা ঋণকে PSL থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কগুলিকে প্রকৃত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে বাধ্য করবে। এর ফলে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ঋণের প্রবাহ বাড়বে।

ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক তথ্য জমার নতুন নিয়ম ব্যাঙ্কগুলির উপর আরও জবাবদিহিতা আরোপ করবে। এর মাধ্যমে RBI নিশ্চিত করতে চায় যে পিএসএল লক্ষ্যমাত্রা কেবল কাগজে-কলমে পূরণ না হয়ে বাস্তবে প্রয়োগ হয়।

২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর এই নির্দেশিকা ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু করবে। এটি দুর্বল শ্রেণির উন্নয়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে RBI-এর প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।