ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া একটি নতুন সোনার ও রূপোর ঋণ (Gold Loan) কাঠামো ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালের ৬ জুন ঘোষিত এই সংস্কারগুলি ঋণগ্রহীতাদের অধিক সুরক্ষা, ঋণের পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এবং ঋণদাতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছে। এই নীতিমালা বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, এনবিএফসি (NBFC), সমবায় ব্যাঙ্ক এবং হাউসিং ফাইনান্স কোম্পানিগুলির জন্য প্রযোজ্য হবে।
চলুন দেখে নিই এই নতুন নিয়মে কী কী বড় পরিবর্তন এসেছে:
১. ছোট ঋণের ক্ষেত্রে বেশি ঋণের পরিমাণ (Loan-to-Value বা LTV বৃদ্ধি)
এখন থেকে সোনার মূল্য অনুযায়ী ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৭৫% থেকে বাড়িয়ে ৮৫% করা হয়েছে, তবে এই নিয়ম শুধুমাত্র সর্বোচ্চ ২.৫ লক্ষ টাকার ঋণের জন্য প্রযোজ্য হবে (সুদসহ)।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সোনার মূল্য হয় ১ লক্ষ টাকা, তাহলে আপনি এখন সর্বোচ্চ ৮৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন।
২. ছোট ঋণের জন্য আর কোনও আয় যাচাই নয়
২.৫ লক্ষ টাকার নিচের সোনার ঋণের ক্ষেত্রে আর ঋণগ্রহীতার আয় সংক্রান্ত তথ্য বা ক্রেডিট স্কোর যাচাই করার প্রয়োজন নেই। এর ফলে গ্রামীণ এবং নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ঋণ গ্রহণ আরও সহজ ও সুলভ হবে।
৩. বুলেট রেপেমেন্ট ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১২ মাস
যে ঋণে সুদ ও মূল টাকা একসাথে ঋণ মেয়াদ শেষে পরিশোধ করতে হয় (Bullet Repayment Loan), সেই ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ এখন ১২ মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে ঋণগ্রহীতারা দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ফাঁদে পড়বেন না।
৪. সোনা ও রূপোর বন্ধক রাখার সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত
একজন ঋণগ্রহীতা সর্বোচ্চ:
- সোনার গয়না: ১ কেজি পর্যন্ত
- সোনার মুদ্রা: ৫০ গ্রাম পর্যন্ত
- রূপোর গয়না: ১০ কেজি পর্যন্ত
- রূপোর মুদ্রা: ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত
- বন্ধক রাখতে পারবেন। এই সীমা প্রতিটি ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, যেকোনও ব্যাঙ্ক বা এনবিএফসি-তে।
৫. ঋণ পরিশোধের পর বন্ধক দ্রব্য দ্রুত ফেরত দিতে হবে
ঋণ মিটিয়ে ফেলার পর সোনা বা রূপো সেই দিনেই বা সর্বোচ্চ ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঋণগ্রহীতার হাতে ফেরত দিতে হবে। এই সময়সীমা না মানলে, ব্যাঙ্ক বা প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বিলম্বিত দিনের জন্য ৫,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬. বন্ধককৃত দ্রব্য হারালে বা নষ্ট হলে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
যদি সোনা বা রূপো ব্যাঙ্কের হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে চুরি যায়, হারিয়ে যায় বা কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় (অডিট, ট্রান্সপোর্ট, স্টোরেজ ইত্যাদির সময়), সেক্ষেত্রে ঋণদাতাকে পুরো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭. বন্ধক দ্রব্য নিলাম সংক্রান্ত নিয়ম আরও কড়া ও স্বচ্ছ
- যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক
- নিলামের আগে যথাযথভাবে নোটিশ দিতে বাধ্য
- ন্যূনতম নিলাম মূল্য হবে বাজারমূল্যের ৯০%
- যদি দু’বার নিলাম ব্যর্থ হয়, তবেই ৮৫% দামে বিক্রির অনুমতি
- নিলামের পর যদি অতিরিক্ত অর্থ থাকে, তা ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ঋণগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হবে
৮. স্থানীয় ভাষায় স্পষ্ট তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক
ঋণের সমস্ত শর্ত, সোনার মূল্যায়ন সংক্রান্ত তথ্য এবং নথি ঋণগ্রহীতার পছন্দের ভাষায় বা স্থানীয় ভাষায় দিতে হবে। যদি ঋণগ্রহীতা নিরক্ষর হন, তবে একজন স্বাধীন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এইসব ব্যাখ্যা করতে হবে।
কার্যকর হওয়ার সময়সীমা
এই নতুন নিয়ম ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রযোজ্য হবে। তার আগে নেওয়া ঋণগুলির ক্ষেত্রে আগের নিয়মই কার্যকর থাকবে।
এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে আরবিআই দেশের সোনার ঋণ ব্যবস্থায় আরও সুশৃঙ্খলতা, স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা আনার চেষ্টা করছে। বিশেষত গ্রামীণ ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগণের জন্য ঋণ গ্রহণ আরও সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এর ফলে ঋণদাতা সংস্থাগুলিকেও আরও দায়িত্ববান ও সেবামূলক আচরণ করতে হবে।
এই নতুন কাঠামো দেশের লক্ষ লক্ষ সোনা ও রূপোর ঋণগ্রহীতার জন্য একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে।