পশ্চিমবঙ্গের শিল্পোন্নয়নে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী রেশমি গ্রুপ এবার বড় বিনিয়োগের ঘোষণা করল। সংস্থাটি পুরুলিয়ায় একটি সমন্বিত ইস্পাত কারখানা এবং একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে চলেছে। বিনিয়োগের অঙ্ক প্রায় ₹১০,০০০ কোটি টাকা, যা আগামী দিনে রাজ্যের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থান—দুই ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের পরিধি
রেশমি গ্রুপের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পুরুলিয়ায় তৈরি হবে একটি ২.৮ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টিগ্রেটেড স্টিল প্ল্যান্ট। পাশাপাশি থাকবে একটি ৪০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, যা পুরো প্রকল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। জমি সংক্রান্ত সমস্ত প্রক্রিয়া অনেকটাই সম্পূর্ণ হয়েছে, ইতিমধ্যেই প্রায় ৯৩৮ একর জমি প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১৮,০০০ নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। যার মধ্যে থাকবে সরাসরি ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান। বিশেষ করে পুরুলিয়া ও সংলগ্ন জেলার যুবকদের জন্য এটি বড় সুযোগ হতে পারে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু চাকরিই নয়, ছোট ব্যবসা ও পরিষেবা ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে সমাপ্তি
রেশমি গ্রুপের তরফে জানানো হয়েছে, ধাপে ধাপে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। পুরো প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে আরও কয়েক বছর। লক্ষ্য রাখা হয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ করার।
রেশমি গ্রুপের পূর্ব অভিজ্ঞতা
রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রে রেশমি গ্রুপের নাম নতুন নয়। ইতিমধ্যেই সংস্থাটি খড়গপুর, ঝাড়গ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ইস্পাত, সিমেন্ট ও খনিজ শিল্পে কাজ করছে। বর্তমানে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত। ফলে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আশাবাদী রাজ্য সরকারও।
রাজ্যের শিল্পনীতির সাফল্য?
রাজ্য সরকার দীর্ঘদিন ধরেই নতুন শিল্প আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। বারবার বলা হয়েছে—বাংলায় শিল্প ফেরাতে হবে। রেশমি গ্রুপের এই বিনিয়োগকে সেই প্রচেষ্টার বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে প্রশাসনের একাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, পুরুলিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জেলায় এত বড় মাপের শিল্প প্রকল্প শুধু কর্মসংস্থানই তৈরি করবে না, বরং অবকাঠামোগত উন্নয়নও ঘটাবে। নতুন রাস্তা, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হবে।
স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা
পুরুলিয়ার মানুষ বহুদিন ধরেই শিল্প প্রকল্পের অপেক্ষায় ছিলেন। স্থানীয়দের মতে, জেলার অনেক যুবক কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে চলে যান। এই নতুন স্টিল প্ল্যান্ট হলে তাঁরা নিজেদের জেলাতেই কাজের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
রেশমি গ্রুপের এই বিনিয়োগ নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক বড় আশার খবর। রাজ্যে যখন শিল্পোন্নয়ন নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে, তখন পুরুলিয়ার এই প্রকল্প নতুন করে আস্থা জাগাচ্ছে। আগামী দিনে যদি নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তবে এটি শুধু বাংলার শিল্প মানচিত্রেই নয়, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।


