নয়াদিল্লি, ৭ অক্টোবর ২০২৫: ভারতের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আনার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি (CCEA) মঙ্গলবার চারটি বড় রেল মাল্টিট্র্যাকিং প্রকল্পকে সবুজ সংকেত দিল। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও ছত্তিশগড়ে প্রায় ৮৯৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হবে এই প্রকল্পে, যার মোট ব্যয় প্রায় ₹২৪,৬৩৪ কোটি টাকা।
কোন কোন প্রকল্প অনুমোদিত?
সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অনুমোদিত প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে—
- মহারাষ্ট্র: ওয়ার্ধা-ভুসাওয়াল সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন (৩১৪ কিমি)
- মহারাষ্ট্র ও ছত্তিশগড়: গণ্ডিয়া-ডোঙ্গারগড় সেকশনে চতুর্থ লাইন (৮৪ কিমি)
- গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশ: ভাদোদরা-রতলাম সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন (২৫৯ কিমি)
- মধ্যপ্রদেশ: ইটারসি-ভোপাল-বিনা সেকশনে চতুর্থ লাইন (২৩৭ কিমি)
এই প্রকল্পগুলি ১৮টি জেলা ও প্রায় ৩,৬৩৩টি গ্রাম জুড়ে উন্নত রেল সংযোগ প্রদান করবে, যার মোট জনসংখ্যা ৮৫.৮৪ লক্ষ। এর মধ্যে বিদিশা (মধ্যপ্রদেশ) ও রাজনানদগাঁও (ছত্তিশগড়) — এই দুটি ‘আকাঙ্ক্ষিত জেলা’-ও রয়েছে।
রেল সক্ষমতা ও অর্থনৈতিক প্রভাব
মাল্টিট্র্যাকিং প্রকল্পগুলির ফলে—
- ভিড় কমবে ও রেল চলাচল আরও নির্ভরযোগ্য হবে।
- পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে সময় সাশ্রয় হবে।
- আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।
- নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে।
এগুলি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ও প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি জাতীয় মাস্টার প্ল্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা মাল্টি-মডাল সংযোগ ও লজিস্টিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ
নতুন রেললাইনগুলি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে। এর মধ্যে রয়েছে—
- সাঁচি
- সতপুরা টাইগার রিজার্ভ
- ভীমবেটকা
- হাজারা জলপ্রপাত
- নওয়েগাঁও জাতীয় উদ্যান
এর ফলে শুধু অর্থনীতি নয়, পর্যটন শিল্পও লাভবান হবে।
পরিবেশগত সুফল
প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বার্ষিক ৭৮ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত মাল পরিবহন সম্ভব হবে। পাশাপাশি—
- প্রায় ২৮ কোটি লিটার তেল আমদানি কমবে।
- ১৩৯ কোটি কেজি CO₂ নির্গমন হ্রাস পাবে।
- যা পরিবেশগত দিক থেকে প্রায় ৬ কোটি গাছ লাগানোর সমান সুফল দেবে।
সরকারের প্রতিশ্রুতি
এই চারটি রেল প্রকল্প ভারতের আধুনিক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি আরও দৃঢ় করল। সরকার আশা করছে, ২০৩০-৩১ অর্থবছরের মধ্যে প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হবে।
এটি একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণেও সহায়ক হবে।