বিজেপির ব্যাংকিং নীতি পরিবর্তনের দাবিতে রাহুল গান্ধীর জোরালো বক্তব্য

rahul-gandhi-strong-remarks-demand-bjp-banking-policy-change

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi) শনিবার অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি সরকারের “পক্ষপাতমূলক নীতি” এবং “নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা” ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে একটি সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর ফলে কনিষ্ঠ কর্মীরা “চাপ এবং বিষাক্ত কাজের পরিবেশে” ভুগছেন বলে তিনি দাবি করেছেন। বিজেপি সরকারের উপর “১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মাফ করে দেওয়ার” অভিযোগ তুলে গান্ধী বলেন, সরকারের “অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা” হাজার হাজার সৎ কর্মজীবী পেশাদারদের জীবনে মানবিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Advertisements

সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে রাহুল গান্ধী আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তার সাক্ষাতের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, এই কর্মীরা “অব্যবস্থাপনার” শিকার হয়েছেন। কংগ্রেস এই ধরনের শ্রমজীবী পেশাদারদের জন্য লড়াই করবে এবং “কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও শোষণ” বন্ধ করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি এই ধরনের “অন্যায়ের” শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

   

“বিজেপি সরকার তাদের ধনকুবের বন্ধুদের জন্য ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মাফ করে দিয়েছে। পক্ষপাতমূলক নীতি এবং নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরকে সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এই বোঝা শেষ পর্যন্ত কনিষ্ঠ কর্মীদের ওপর পড়ছে, যাঁরা চাপ এবং বিষাক্ত কাজের পরিবেশে ভুগছেন,” তিনি তাঁর পোস্টে লিখেছেন।

রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ৭৮২ জন প্রাক্তন কর্মীর পক্ষে একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সংসদে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। “তাঁদের গল্পে একটি উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে—কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, জোরপূর্বক স্থানান্তর, এনপিএ লঙ্ঘনকারীদের অবৈধ ঋণ দেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিশোধ এবং ন্যায্য প্রক্রিয়া ছাড়াই চাকরি থেকে বরখাস্ত। দুটি মর্মান্তিক ক্ষেত্রে এটি আত্মহত্যার কারণ হয়েছে,” তিনি বলেন।

তিনি আরও জানান, বিজেপি সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মানবিক ক্ষতি দেশজুড়ে হাজার হাজার সৎ কর্মজীবী পেশাদারদের প্রভাবিত করছে। “আপনি যদি এমন একজন কর্মজীবী পেশাদার হন যিনি এই ধরনের অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তবে আমার সঙ্গে আপনার গল্প শেয়ার করুন—https://rahulgandhi.in/awaazbharatki,” তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা জানান, চিকিৎসার জন্য ছুটিতে থাকাকালীন বা ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার কারণে তাঁদের হঠাৎ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই সাক্ষাৎ সংসদ ভবন কমপ্লেক্সে তাঁর কার্যালয়ে হয়। বেসরকারি এই ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

কংগ্রেস একটি পোস্টে জানিয়েছে, কর্মীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তাঁরা বলেন, চিকিৎসার জন্য ছুটিতে থাকাকালীন, অনুমোদিত অনুপস্থিতির সময়ে বা ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দলটি আরও জানায়, কর্মীরা উল্লেখ করেছেন যে এই ধরনের অনুশীলন শুধু আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং লাভ সর্বাধিক করার চাপে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে এটি একটি ব্যাপক প্রবণতা।

Advertisements

রাহুল গান্ধীর অভিযোগ ও প্রেক্ষাপট
রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর কর্মীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষপাতমূলক নীতি বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েছে, যখন সাধারণ কর্মীরা চাপের মুখে পড়েছেন। ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মাফের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলগুলি তুলে আসছে, যা বিজেপি সরকার বারবার অস্বীকার করে এসেছে। তবে, এই অভিযোগ ব্যাঙ্কিং সেক্টরের স্বাস্থ্য এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।

আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতে যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে, তা কর্মক্ষেত্রে শোষণ এবং অবিচারের একটি গভীর সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। হয়রানি, জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং এনপিএ (নন-পারফর্মিং অ্যাসেট) লঙ্ঘনকারীদের ঋণ দেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রতিশোধের অভিযোগ ব্যাঙ্কগুলির অভ্যন্তরীণ শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে। দুটি আত্মহত্যার ঘটনা এই সমস্যার গুরুতরতাকে আরও স্পষ্ট করে।

ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বৃহত্তর প্রভাব
কংগ্রেসের দাবি, এই সমস্যা শুধু আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে লাভের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে। এটি কনিষ্ঠ কর্মীদের জন্য কাজের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছে। ব্যাঙ্কিং সেক্টরে নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং সরকারের নীতি এই সংকটকে আরও গভীর করছে বলে বিরোধী দলের নেতা মনে করেন।

রাহুলের আহ্বান ও কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি
রাহুল গান্ধী এই ঘটনাকে একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি কর্মীদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়ে এই বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কংগ্রেস দল এই সমস্যাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে শ্রমজীবীদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করবে বলে জানিয়েছে।

রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ এবং প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মীদের অভিজ্ঞতা ভারতের ব্যাঙ্কিং সেক্টরের চলমান সংকট এবং এর কর্মীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সরকারের নীতি, ব্যাঙ্কগুলির অভ্যন্তরীণ শাসন এবং কর্মীদের কাজের পরিবেশ—এই তিনটি বিষয় এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এই পরিস্থিতি কীভাবে সমাধান হয়, তা আগামী দিনে দেখার বিষয়।