২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ব্যাঙ্কিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হলেও, বাজার দখলের লড়াইয়ে পাবলিক সেক্টর ব্যাংক (Public Sector Banks) গুলি প্রাইভেট ব্যাংক (PVB) গুলির তুলনায় এগিয়ে গেল। ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই গুরুত্বপূর্ণ চিত্র।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণ বিতরণের গতি কমলেও পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলি তাদের ভারসাম্যপূর্ণ ও কৌশলী অর্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে। ঋণের প্রকৃতি এবং ভৌগলিক দিক — উভয় ক্ষেত্রেই এই অগ্রগতি স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
ক্রেডিট-ডিপোজিট অনুপাত ও বিতরণে পার্থক্য:
প্রাইভেট ব্যাংকগুলির ক্রেডিট-ডিপোজিট (CD) রেশিও ছিল তুলনামূলকভাবে উচ্চ, যা তাদের আগ্রাসী ঋণ বিতরণ নীতির ইঙ্গিত দেয়। তবে FY25 অর্থবছরে এই ঋণ বৃদ্ধির হার হঠাৎ করে কমে যাওয়ায়, প্রাইভেট ব্যাংকগুলির ইনক্রিমেন্টাল CD রেশিও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অর্থাৎ, নতুন ঋণ বিতরণে একটি মন্থরতা দেখা যায়।
এর ঠিক বিপরীতে, পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলি অনেক বেশি স্থিতিশীলতা বজায় রেখে, কৌশলগতভাবে তাদের ব্যালান্সশিট ব্যবহার করে ঋণ বিতরণে এগিয়ে যায়। বিশেষ করে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এবং ডিমান্ড লোনের ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি কার্যকরী ছিল। এই দুটি ঋণ সাধারণত ব্যবসায়িক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং PSB গুলির এই খাতে কার্যকরী উপস্থিতি তাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।
খাতভিত্তিক ঋণ বণ্টনে পরিবর্তন:
ব্যাংকিং খাতের একটি বড় পরিবর্তন দেখা গেছে খাতভিত্তিক ঋণ বণ্টনের ক্ষেত্রে। RBI-এর তরফে অনিরাপদ ব্যক্তিগত ঋণের (unsecured personal loans) উপর নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রাইভেট ব্যাংকগুলি বিশেষত পার্সোনাল লোন বিতরণে পিছিয়ে পড়ে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলি রিটেল ঋণের বাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। বিশেষ করে হাউসিং লোন বা গৃহঋণ খাতে তারা অনেকটা বাজার পুনরুদ্ধার করে।
এছাড়াও, যে খাতে আগে প্রাইভেট ব্যাংকগুলিই ছিল মূল চালিকাশক্তি — সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট বা শিল্পঋণেও এখন PSB-রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় যে PSB-রা এখন শিল্পখাতেও নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।
ভৌগলিক দিক থেকে PSB-দের প্রাধান্য:
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, FY25 অর্থবছরে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলি গ্রামীণ এবং আধা-শহর এলাকায় অনেক বেশি সক্রিয় ছিল।
গ্রামাঞ্চলে নতুন ঋণ বিতরণের বড় অংশ — প্রায় ৬০ শতাংশ-এরও বেশি, এসেছে PSB-গুলির হাত ধরে। এর মাধ্যমে তারা আবারও প্রমাণ করেছে, ভারতের মাটির গভীরে ছড়িয়ে থাকা এই ব্যাংকগুলিই এখনও দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঋণদাতা।
এমনকি শহর এবং মেট্রো এলাকাতেও, FY24 সালে হারানো বাজারের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এর মানে, শহরাঞ্চলে যেখানে প্রাইভেট ব্যাংকগুলির আধিপত্য ছিল, সেখানে এখন কিছুটা হলেও সমতা ফিরছে।
ঋণগ্রহীতা ভিত্তিক প্রবণতা ও রিটেল ব্যাংকিংয়ের শক্তি:
প্রতিবেদন অনুসারে, FY25 অর্থবছরে ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতা বা individuals-এর মধ্যে ঋণের প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। এটি রিটেল ব্যাংকিং খাতের শক্তি ও স্থিতিশীলতা তুলে ধরে।
এই খাতে পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে তারা এখন গ্রাহক কেন্দ্রিক পরিষেবা ও কাস্টমাইজড ঋণ পণ্যের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যা আগে মূলত প্রাইভেট ব্যাংকগুলির একচেটিয়া ছিল।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যায়, ধীরগতির ঋণ প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও পাবলিক সেক্টর ব্যাংকগুলি সতর্ক অথচ কার্যকর ব্যালান্সশিট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারে নিজেদের দৃঢ় উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করেছে
নিয়ন্ত্রক হস্তক্ষেপ, প্রাইভেট ব্যাংকগুলির সতর্কতা, এবং গ্রামীণ ও খুচরা ঋণে PSB-র অগ্রগতি — সব মিলিয়ে FY25 একটি মোড় ঘোরানো বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের ব্যাংকিং খাতের জন্য।
যদি এই ধারা FY26 অর্থবছরেও বজায় থাকে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই PSB-গুলি আবারও দেশের ব্যাঙ্কিং খাতের মেরুদণ্ডে পরিণত হবে — শুধু স্থিতিশীলতা নয়, প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্সেও।
