ব্যক্তিগত লোনে ১৭% বৃদ্ধি, উত্থানে সরকারি ব্যাংক

Personal loan trends: ভারতের ব্যাংকিং খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো সরকারি ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত ব্যাংকগুলোর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। রিজার্ভ…

Personal Loan Growth india girl

Personal loan trends: ভারতের ব্যাংকিং খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো সরকারি ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত ব্যাংকগুলোর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI) ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এ পরিবর্তন ব্যাংকিং খাতে একটি নতুন গতিপথ নির্দেশ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রূপান্তরের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বেসরকারি ব্যাংক—বিশেষত এইচডিএফসি ব্যাংক ও অ্যাক্সিস ব্যাংকের—ঋণ বিতরণে ধীর গতি।

ঋণ বণ্টনে সরকারি ব্যাংকের আধিপত্য
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলোর গৃহঋণ (হোম লোন) প্রবৃদ্ধি ৪৬.৪%-এ পৌঁছেছে, যা আগের বছরের ৪৫.১% থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। একই সময়ে ব্যক্তিগত ব্যাংকগুলোর গৃহঋণ প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৫৩.৬%-এ, যা ২০২৩-২৪ সালে ছিল ৫৪.৯%। এই পরিসংখ্যানগুলো প্রমাণ করে যে, সরকারি ব্যাংকগুলো এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং গতিশীল হয়ে উঠেছে।

   

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত ঋণ খাতে ১৭% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যেখানে ব্যক্তিগত ব্যাংকগুলো মাত্র ১০% প্রবৃদ্ধি দেখাতে পেরেছে। শিল্প, পরিষেবা ও ব্যক্তিগত ঋণ খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি ব্যাংকের উপস্থিতি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সরকারি ব্যাংকগুলো ৩৭.৯ লাখ কোটি টাকার শিল্পঋণের ৬০% এবং ৪৯.৯ লাখ কোটি টাকার পরিষেবা খাতে ৫৬% ঋণ বিতরণ করেছে। ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রেও তারা ৫২% হারে, অর্থাৎ ৫১.১ লাখ কোটি টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে।

ক্রেডিট প্রবৃদ্ধি ও আমানতের অমিল
গত চার অর্থবছর ধরে ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আমানত প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। গত ৫০ বছরে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমানত বৃদ্ধির ৮৬% এসেছে নির্দিষ্ট মেয়াদী আমানত (Fixed Deposits – FDs) থেকে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মোট আমানতের মধ্যে ৫০%-এর বেশি ছিল টার্ম ডিপোজিট।

এই প্রবণতা থেকে বোঝা যায়, সাধারণ মানুষ এখন ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ে আরও আগ্রহী হয়ে উঠছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে পেরেছে।

Advertisements

গৃহঋণে গ্রামীণ ভারতের দখল
সরকারি ব্যাংকগুলো গৃহঋণ খাতে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে, বিশেষ করে তৃতীয় স্তরের (Tier-3) শহর ও ছোট শহরগুলোতে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি ব্যাংকগুলো ২.১ লাখ কোটি টাকার নতুন গৃহঋণ বিতরণ করেছে, যা মোট বাজারের ৫৬.১%। এতে বোঝা যায়, সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত জনগণের আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে সরকারি ব্যাংকগুলো।

এনআরআই আমানতের উর্ধ্বগতি
বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রা (NRI) ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আরও আস্থা দেখাচ্ছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনআরআই আমানত বছরে ১০% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এনআরআই আমানতের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪.১৬ লাখ কোটি টাকা, যার অর্ধেকই নির্দিষ্ট মেয়াদী আমানতে রাখা হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, ভারতীয় অর্থনীতি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিশ্বব্যাপী ভারতীয়দের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই পরিবর্তনগুলো প্রমাণ করে যে, সরকারি ব্যাংকগুলো শুধু ‘বিশ্বাসের প্রতীক’ হিসেবেই নয়, প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতাতেও এখন এগিয়ে। প্রযুক্তি-নির্ভর সেবা, অনলাইন ব্যাঙ্কিং ও গ্রাহককেন্দ্রিক নীতির মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের আরও কাছে পৌঁছাতে পারছে।

ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে সরকারি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে, এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কৃষি খাতে ঋণ বণ্টনের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকগুলো দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

সরকারি ব্যাংকগুলোর এই উত্থান শুধুমাত্র একটি আর্থিক সূচকের পরিবর্তন নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের চাহিদা, আস্থা ও আর্থিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি। যেভাবে তারা ব্যক্তি ও শিল্পখাতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করছে, তাতে বোঝা যায়—ভারতের আর্থিক ভবিষ্যৎ এখন অনেক বেশি স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক।