জীবন বিমার খরচ কমাতে বড় পদক্ষেপ, টার্ম ইন্স্যুরেন্সে জিএসটি মুক্তির প্রস্তাব

ভারতে তরুণ পরিবারগুলির জন্য আর্থিক সুরক্ষার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স (Term Life Insurance)। তুলনামূলকভাবে কম প্রিমিয়ামে উচ্চ কভারেজ প্রদান করলেও এখনও অনেকেই…

insurance-claim-dispute-know-your-right-to-appeal

ভারতে তরুণ পরিবারগুলির জন্য আর্থিক সুরক্ষার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স (Term Life Insurance)। তুলনামূলকভাবে কম প্রিমিয়ামে উচ্চ কভারেজ প্রদান করলেও এখনও অনেকেই এটিকে গুরুত্ব দেন না। এর বড় একটি কারণ হল, বর্তমানে টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামের উপর ১৮% পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) আরোপিত হয়। তবে খুব শিগগিরই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।

একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী (Group of Ministers বা GoM) সুপারিশ করেছে যে, সকল প্রকার ‘পিওর রিস্ক টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্ল্যান’কে জিএসটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা হোক। এখন কেবলমাত্র জিএসটি কাউন্সিলের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা। প্রস্তাবটি কার্যকর হলে লক্ষ লক্ষ তরুণ ভারতীয় পরিবারের জন্য জীবন বিমা হবে আরও সাশ্রয়ী।

   

বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী, প্রতিটি টার্ম ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামের উপর ১৮% হারে জিএসটি দিতে হয়। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক আর্থিক সুরক্ষা পাওয়াটাই তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। একাধিক দফার আলোচনার পর মন্ত্রিগোষ্ঠী সুপারিশ করেছে যে, যে সমস্ত টার্ম পলিসি কেবলমাত্র ঝুঁকি কভার করে (অর্থাৎ যার সঙ্গে বিনিয়োগের কোনো উপাদান নেই), সেগুলি সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখা হোক।
এর মধ্যে পড়বে—

ব্যক্তিগত টার্ম পলিসি, ফ্যামিলি কভার, টার্ম পলিসির সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত রাইডার যেমন দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বা ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার।
তবে যেসব পলিসির সঙ্গে বিনিয়োগ যুক্ত, যেমন ULIP (Unit Linked Insurance Plans), সেখানে বিনিয়োগের অংশ করমুক্ত হবে না। অর্থাৎ শুধুমাত্র পিওর টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এই সুবিধা মিলতে চলেছে।

ধরা যাক, একজন ৩০ বছর বয়সি সুস্থ পুরুষ ১ কোটি টাকার কভারেজ সহ একটি টার্ম পলিসি নিচ্ছেন। বার্ষিক প্রিমিয়াম ধরা হচ্ছে ১৫,০০০ টাকা। বর্তমান নিয়মে এর উপর ১৮% জিএসটি যোগ হয়ে প্রিমিয়াম দাঁড়াচ্ছে ১৭,৭০০ টাকা। যদি প্রস্তাবিত জিএসটি মওকুফ কার্যকর হয়, তাহলে এই অতিরিক্ত ২,৭০০ টাকা আর দিতে হবে না।
যাঁরা যুগ্ম জীবন বীমা (Joint Life Policy) নেন বা বিভিন্ন রাইডার যুক্ত করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। ২৫–৩০

বছরের মেয়াদে এটি যোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে ₹৬০,০০০ থেকে ₹৭৫,০০০ পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদি এই সঞ্চয় পরিবারগুলিকে আর্থিক পরিকল্পনার অন্য খাতে অর্থ ব্যয় করার সুযোগ দেবে।

ভারতে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রসার এখনও সন্তোষজনক নয়। বিশেষত টার্ম প্ল্যানের ক্ষেত্রে মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নন। অনেক কর্মজীবী মানুষ খরচের কারণে বা সচেতনতার অভাবে প্রয়োজনীয় কভারেজ নেন না।

এই প্রস্তাব কার্যকর হলে—
বিমা কেনার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।
প্রথমবার বিমা কিনতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়বে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জাতীয় লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কর ছাড় শুধু অর্থনৈতিক স্বস্তিই দেবে না, বরং তরুণদের মধ্যে দায়িত্বশীল আর্থিক পরিকল্পনার দিকেও উত্সাহিত করবে।

Advertisements

যুবক দম্পতি বা ছোট পরিবারগুলির আর্থিক জীবনে একাধিক দায়িত্ব থাকে—বাড়ির ঋণ, সন্তানের শিক্ষা, সংসারের খরচ ও ভবিষ্যতের সঞ্চয়। এর মাঝে টার্ম ইন্স্যুরেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার জাল। প্রস্তাবিত জিএসটি মওকুফ হলে তা আরও সহজলভ্য হবে।

উদাহরণস্বরূপ—
মাসিক খরচ কমবে: জিএসটি বাদ দিলে প্রিমিয়াম হবে আরও সাশ্রয়ী।
তাড়াতাড়ি কেনার সুবিধা: কম খরচের কারণে তরুণ বয়সেই বিমা কেনার আগ্রহ বাড়বে।
বেশি কভারেজ নেওয়া সম্ভব: সাশ্রয় হওয়া অর্থ দিয়ে উচ্চতর সাম অ্যাসিউরড বা রাইডার যোগ করা যাবে।
মানসিক শান্তি: এক আয়ের পরিবারগুলির জন্য নিরাপত্তার বোধ আরও দৃঢ় হবে।

বিশেষ করে পারমাণবিক পরিবার, একক অভিভাবক বা সদ্য কর্মজীবনে প্রবেশ করা তরুণদের জন্য এই করছাড় কার্যকর হলে তা অনেক বড় সহায়ক প্রমাণিত হবে।

অনেকেই ভাবতে পারেন, জিএসটি মওকুফ কার্যকর হওয়া পর্যন্ত বিমা কেনা বন্ধ রাখবেন। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। যদি পরিবারের আর্থিক নির্ভরশীলতা থাকে, তবে দেরি না করে অবিলম্বে টার্ম ইন্স্যুরেন্স নেওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে—
নীতিগতভাবে, যেদিন আপনার বিমার প্রয়োজন, সেদিনই সেটি নেওয়া উচিত।
ভবিষ্যতে জিএসটি মওকুফ কার্যকর হলে কোম্পানিগুলি নতুন ও পুরনো উভয় গ্রাহককেই সুবিধা দেওয়ার পথ খুঁজে নিতে পারে।
কেউ কেউ প্রিমিয়ামে ছাড় বা রিনিউয়ালে সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
টার্ম লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে জিএসটি সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। এটি কেবল প্রিমিয়াম কমিয়ে তরুণ পরিবারগুলির আর্থিক সুরক্ষা বাড়াবে না, বরং দেশে বিমা সচেতনতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যকেও এগিয়ে দেবে।

চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষা থাকলেও বলা যায়—‘মানসিক শান্তি কোনোদিন করের বোঝা হওয়া উচিত নয়।’ এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে ভারতের লাখো পরিবার আরও সুরক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।