১৮ মাসের আটকে থাকা ডিএ বকেয়া মুক্তির জন্য চাপ বাড়ছে কেন্দ্রে

8th Pay Commission latest update: নির্মল আশার মাঝে সরকারি কর্মচারীদের দাবিতে নতুন করে জোরালো হল ১৮ মাসের দুর্ভোগ ভাতা (ডিএ) ও দুর্ভোগ প্রণোদনা (ডিআর) বকেয়া…

8th Pay Commission, DA arrears news, Central government ,employees

8th Pay Commission latest update: নির্মল আশার মাঝে সরকারি কর্মচারীদের দাবিতে নতুন করে জোরালো হল ১৮ মাসের দুর্ভোগ ভাতা (ডিএ) ও দুর্ভোগ প্রণোদনা (ডিআর) বকেয়া পরিশোধের দাবি। ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের যৌথ পরামর্শক মেশিনারির (NC-JCM) ৬৩তম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই ইস্যুটি আবারও সামনে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীরা এই বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনও স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি বা সময়সীমা ঘোষণা হয়নি।

করোনার সময় আটকে রাখা বকেয়া, সরকারি কর্মচারীদের কষ্ট বেড়েছে
করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১৮ মাসের ডিএ ও ডিআর বৃদ্ধি আটকে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়কালের তিনটি বর্ধিত কিস্তি আটকে রাখা হয়েছিল, যা প্রায় ৫০ লাখ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং ৬০ লাখেরও বেশি পেনশনভোগীর ওপর প্রভাব ফেলেছে। আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় কর্মচারীদের জীবনের উপর বড় ধরনের চাপ পড়েছে।

   

NC-JCM-এর স্টাফ সাইড এই দাবির পক্ষে একাধিকবার বলেছে যে আটকে থাকা এই বকেয়া পরিশোধ না করলে সরকারি কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। মহামারীর সময় আটকে রাখা এই টাকা এখন মুক্ত করে দিতে হবে।

সরকারের অবস্থান: আর্থিক বোঝাপড়া এখনও অনিশ্চিত
তবে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এই বকেয়া পরিশোধের কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর্থিক মন্ত্রক জানিয়েছে, মহামারীকালীন বিভিন্ন আর্থিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে এই পরিমাণ অর্থের বোঝা বহন করা সম্ভব হয়নি। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব ২০২০-২১ অর্থবর্ষের বাইরে গিয়ে পরবর্তী অর্থবছরগুলিতেও বাজেট পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলেছে বলে সরকারের বক্তব্য।

ডিএ রিভিশনের নিয়মাবলী ব্যাহত হয়েছে
সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের ডিএ ও ডিআর সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে সংশোধিত হয়, যেখানে ভোক্তা মূল্য সূচকের (CPI) পরিবর্তনকে ধরা হয়। কিন্তু কোভিডের প্রাদুর্ভাবে এই নিয়মে ব্যাঘাত ঘটায় ১৮ মাসের ডিএ বৃদ্ধি আটকে দেওয়া হয়। জুলাই ২০২১ থেকে পুনরায় ডিএ বৃদ্ধি শুরু হলেও আটকে থাকা কিস্তিগুলি কোনও দিনও পেছনের তারিখ থেকে পরিশোধ করা হয়নি।

৮ম পে কমিশনের অনুমোদন, কিন্তু এখনও স্পষ্টতা নেই
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সরকার ৮ম পে কমিশন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার কথা। এই কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের বেতন, পেনশন ও ভাতার কাঠামো ব্যাপকভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু এর ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’ (ToR) অনুমোদিত হয়নি এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়োগও সম্পন্ন হয়নি। এই অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যে আটকে থাকা ডিএ-ডিআর বকেয়া বিষয়টি কমিশনের কাজের আওতায় আসবে কিনা।

NC-JCM-এর স্টাফ সাইডের সচিব শিব গোপাল মিশ্র এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “আমরা আশা করছি সরকার শীঘ্রই টার্মস অফ রেফারেন্স অনুমোদন করবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব হওয়া উচিত।”

Advertisements

সরকারী কর্মচারীদের আশা আর অগ্রগতি
বর্তমানে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলো এই বিষয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। তারা বিশ্বাস করে যে ৮ম পে কমিশন বা কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আলাদা আর্থিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে এর কোনও সময়সীমা এখনো ঘোষিত হয়নি।

আটকে থাকা বকেয়া: মহামারীর পরিকাঠামোর একটি অব্যক্ত অধ্যায়
১৮ মাসের এই ডিএ-ডিআর ফ্রিজ এমন একটি অধ্যায় হয়ে রইল যা কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে প্রায় ১ কোটি সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। বেতন ও পেনশন বৃদ্ধি আটকে থাকায় তাদের ক্রমবর্ধমান জীবনের ব্যয় সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান উন্নয়নে এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে এই বকেয়া পরিশোধ অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই চাপ সামাল দেওয়ার।

সরকারি কর্মচারীদের ১৮ মাসের ডিএ ও ডিআর বকেয়া দাবির পেছনে রয়েছে জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি, আর্থিক ন্যায্যতার দাবি এবং মহামারীর সময়ের জরুরি আর্থিক সংকটের প্রভাব। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই দাবি মেনে নেওয়া হয়নি, তবে ৮ম পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে বিষয়টি অন্তত আলোচনা তালিকায় আসবে। সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য আগামী দিনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এই বকেয়া মুক্তির প্রতীক্ষায়।

এই বিষয়টি ভবিষ্যতে কিভাবে এগোবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে কর্মচারী সংগঠনগুলো তাদের দাবিতে সচেতনতা ও জোরদার করার মাধ্যমে যথাযথ সমাধানের পথ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।