‘বিকশিত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে সমাজ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তনের ডাক

আদানি এন্টারপ্রাইজেস-এর পরিচালক প্রণব আদানি বৃহস্পতিবার দিল্লিতে চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন (CRF)-এর প্রথম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ভারতের বিকশিত ভবিষ্যতের জন্য একটি সার্বিক ও…

Pranav Adani Calls for Holistic Transformation to Achieve ‘Viksit Bharat’ at Chintan Research Foundation Event

আদানি এন্টারপ্রাইজেস-এর পরিচালক প্রণব আদানি বৃহস্পতিবার দিল্লিতে চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন (CRF)-এর প্রথম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ভারতের বিকশিত ভবিষ্যতের জন্য একটি সার্বিক ও বিস্তৃত রূপান্তর আবশ্যক। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’-এর (Viksit Bharat) স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের দেশকে একটি গভীর রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।”

চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রণব আদানি বলেন, “এই ফাউন্ডেশনটি জলবায়ু পরিবর্তন, সুবিচারভিত্তিক জ্বালানি রূপান্তর, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অর্থনীতি, গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লাই চেইন, বাণিজ্যের বিবর্তন ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের মতো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে কাজ করছে।”

   

তিনি আরও বলেন, “গত তিন দশক ধরে আদানি গ্রুপ আমাদের দেশের সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো খাতে প্রবেশ করে উন্নয়নের গতি বাড়াচ্ছে এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করছে। আমি চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে ঠিক একই পথেই এগোতে দেখছি—যেখানে স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণা, আলোচনা ও প্রভাব তৈরির কাজে এগিয়ে যাবে।”

‘ভারত কেবল রাজধানী নয়, হৃদয়ভূমির দেশ’:
প্রণব আদানি ভারতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলেন, “ভারত কেবল দিল্লি বা অন্যান্য রাজধানী শহর নয়। ভারত আসলে বাস করে হৃদয়ভূমিতে—রাঁচি, রায়পুর, ভুবনেশ্বর, অথবা উত্তর-পূর্বাঞ্চল—সেখানেই আমাদের প্রকৃত ভারত রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছি, আমাদের গবেষণা ও কার্যক্রম সেখানেই পৌঁছাতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাজ যেন কেবল রাজধানীকেন্দ্রিক না হয়। চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে এমনভাবে প্রসারিত করতে হবে যাতে ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা ও চাহিদাও গবেষণার মূল আলোচনায় উঠে আসে।”

গবেষণার প্রসার ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ:
আদানি বলেন, “চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে তার কাজকে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে নিয়ে যেতে হবে। গবেষণা করতে হবে স্থানীয় বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে হবে, স্থানীয় ইভেন্ট আয়োজন করতে হবে, এবং জনগণের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে হবে—যাতে দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে সেই সমস্যাগুলিকে তুলে ধরা যায়। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমেই একটি সত্যিকারের বিকশিত ভারতের ভিত্তি গড়ে উঠবে।”

Advertisements

ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থান ও সম্ভাবনা:
আদানি এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারত এখন একটি খুবই শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আমাদের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের শক্তিই আমাদের আসল সম্পদ। এক বক্তা আজ বলেছেন, দেশের ৫০ শতাংশ জনগণ জিডিপি বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ এখনও নিষ্ক্রিয়। সেই নিষ্ক্রিয় অংশকে সক্রিয় করতেই হবে, তবেই ভারতের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা, আদানি গ্রুপ, ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী দুই দশকে ভারত বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে।”

চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ দিশা:
চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন তার গবেষণা কর্মসূচি, বিশ্লেষণ, এবং নীতিনির্ধারণমূলক সুপারিশের মাধ্যমে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও ন্যায়সঙ্গত রূপান্তরের দিশা দেখাবে বলে আশা প্রকাশ করেন আদানি। তিনি বলেন, “যেমন আমরা দেশের পরিকাঠামো গঠনে উদ্যোগী হয়েছি, তেমনই চিন্তন ফাউন্ডেশন আমাদের মানসিক পরিকাঠামো গঠনে নেতৃত্ব দেবে।”

তিনি জানান, “আমাদের কাজ হবে শুধু সমস্যা চিহ্নিত করা নয়, বরং সমাধানসূত্রও তৈরি করা। প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর যাতে আমাদের গবেষণার মাধ্যমে মূল আলোচনায় উঠে আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

প্রণব আদানির বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে, ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার জন্য দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের অংশগ্রহণ, সমস্যা এবং সম্ভাবনাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। গবেষণা কেন্দ্রের কাজ যেন কেবল রাজধানী ও মেট্রো শহরেই সীমাবদ্ধ না থাকে—এই বার্তা তুলে ধরে তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাস্তবভিত্তিক এবং সমগ্র ভারতের উন্নয়নকেন্দ্রিক গবেষণা পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছেন।

চিন্তন রিসার্চ ফাউন্ডেশন যদি এই লক্ষ্যপথে এগোয়, তবে এটি ভারতের নীতি ও উন্নয়ন চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।