ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি হলো পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF)। এই সরকার-সমর্থিত স্কিমটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, কারণ এটি নিরাপত্তা, নির্দিষ্ট মুনাফা এবং কর ছাড়—এই তিন সুবিধাই একসাথে প্রদান করে। তবে এর একটি বড় শর্ত হলো লক-ইন পিরিয়ড, অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগে টাকা তোলা যায় না।
১৫ বছরের মেয়াদ ও পূর্ণ উত্তোলনের সুযোগ:
একটি PPF অ্যাকাউন্ট খোলার পর, এটি ১৫ বছর মেয়াদে পরিপক্ব হয়। এই সময়সীমা শেষ হলে, জমা মূলধন ও সুদসহ পুরো অর্থ বিনা জরিমানায় তোলা যায়। সবচেয়ে ভালো দিক হলো—এই অর্থ সম্পূর্ণ করমুক্ত, যা এটিকে আরও লাভজনক করে তোলে।
যদি কেউ চান, তাহলে অ্যাকাউন্টটি প্রতি ৫ বছরের ব্লকে বাড়ানো যায়। বাড়ানোর সময়ও জমাকৃত অর্থে সরকার নির্ধারিত হারে সুদ পাওয়া যায়। ফলে, ঝুঁকিমুক্তভাবে সঞ্চয় বাড়ানোর একটি নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে এটি কাজ করে।
আংশিক উত্তোলনের সুযোগ: PPF Withdrawal Rules India
জীবনের জরুরি প্রয়োজনে মাঝে মাঝে অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য সরকার PPF থেকে আংশিক উত্তোলনের সুযোগ রেখেছে।
অ্যাকাউন্ট খোলার ছয় আর্থিক বছর পর অর্থাৎ সপ্তম বছর থেকে এই সুযোগ পাওয়া যায়। উত্তোলনযোগ্য অর্থের পরিমাণ হবে – পূর্ববর্তী চতুর্থ আর্থিক বছরের শেষে থাকা ব্যালেন্সের ৫০ শতাংশ, অথবা আগের আর্থিক বছরের ব্যালেন্সের ৫০ শতাংশ—যেটি কম, সেটি।
তবে, এক আর্থিক বছরে একবারই আংশিক উত্তোলন করা যায়। এ জন্য ব্যাংক বা পোস্ট অফিস থেকে ফর্ম ‘সি’ পূরণ করে আবেদন করতে হয়। অনুমোদনের পর অর্থ সরাসরি সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
বিশেষ ক্ষেত্রে আগাম বন্ধের সুযোগ:
PPF মূলত দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য তৈরি হলেও, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ৫ বছর পর আগাম বন্ধ করা যায়।
এর মধ্যে রয়েছে—
গুরুতর বা প্রাণঘাতী অসুস্থতা (নিজ, স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানদের ক্ষেত্রে)
উচ্চশিক্ষার খরচ
স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যাওয়া (NRI হওয়া)
এই ক্ষেত্রে সরকার জমাকৃত টাকার সুদের উপর থেকে ১% সুদ কমিয়ে দেয়। আগাম বন্ধের জন্য ফর্ম-৫ সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
মৃত্যুর পর অ্যাকাউন্টের নিষ্পত্তি:
যদি অ্যাকাউন্টধারীর মৃত্যু ঘটে, তাহলে লক-ইন পিরিয়ডের নিয়ম প্রযোজ্য হয় না। মনোনীত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারী পুরো অর্থ, সুদসহ তুলে নিতে পারেন।
শেষ কথা:
PPF-এর কঠোর নিয়মের মধ্যেও নমনীয়তা রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা, কর সাশ্রয় ও প্রয়োজনে আংশিক উত্তোলনের সুবিধা—সব মিলিয়ে এটি এখনো ভারতের অন্যতম সেরা সঞ্চয় প্রকল্প।


