PPF Interest Rate: পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) ভারতে একটি সরকার-সমর্থিত দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প, যা ছোট ছোট সঞ্চয়কে উৎসাহিত করার পাশাপাশি কর সুবিধা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প, যা ঝুঁকি-বিমুখ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়।
গত শুক্রবার, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে পিপিএফও রয়েছে। এটি ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পঞ্চম টানা ত্রৈমাসিকের জন্য সুদের হারে কোনো পরিবর্তন না করার ঘোষণা। ফলে, ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পিপিএফ-এর সুদের হার থাকবে ৭.১%। এই সিদ্ধান্ত সরকার-সমর্থিত প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।
এপ্রিল-জুন ২০২৫-এর জন্য পিপিএফ সুদের হার আপডেট
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিক (১ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০২৫) এবং ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিক (১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ৩১ মার্চ ২০২৫)-এর জন্য বিভিন্ন ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার অপরিবর্তিত থাকবে।” এর ফলে পিপিএফ-এর সুদের হার ৭.১%-এ স্থির রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য রিটার্নের নিশ্চয়তা দেয়।
আপনার পিপিএফ ম্যাচুরিটি পরিমাণ কীভাবে গণনা করবেন?
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পিপিএফ ক্যালকুলেটর অনুযায়ী, যদি আপনি ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ১,৫০,০০০ টাকা জমা করেন, তাহলে আপনি ১৮,১৮,২০৯ টাকা সুদ পাবেন। ১৫ বছরের শেষে মোট ম্যাচুরিটি পরিমাণ হবে ৪০,৬৮,২০৯ টাকা। এটি আপনার মোট বিনিয়োগ ২২,৫০,০০০ টাকা (প্রতি বছর ১,৫০,০০০ টাকা করে ১৫ বছর) এবং তার উপর প্রাপ্ত সুদের সমষ্টি। এই গণনা ৭.১% সুদের হারের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে, যা বর্তমানে কার্যকর।
পিপিএফ-এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
পিপিএফ একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয় এর কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্যের জন্য:
- মেয়াদ: পিপিএফ-এর মেয়াদ ১৫ বছর নির্ধারিত, যা ৫ বছরের বৃদ্ধিতে বাড়ানো যায়। এটি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের জন্য নমনীয়তা প্রদান করে।
- ন্যূনতম জমা: অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখতে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০ টাকা জমা করতে হয়।
- সর্বোচ্চ পরিমাণ: প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যায়, যা উল্লেখযোগ্য সঞ্চয়ের সুযোগ দেয়।
- কর সুবিধা: পিপিএফ-এ জমা করা টাকা আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে কর ছাড়যোগ্য।
- ঋণ ও উত্তোলন সুবিধা: কয়েক বছর পর থেকে পিপিএফ থেকে ঋণ নেওয়া এবং উত্তোলনের সুবিধা পাওয়া যায়, যা আর্থিক জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়ক। তবে এই সুবিধাগুলি নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে প্রযোজ্য।
পিপিএফ-এর জন্য যোগ্যতা মানদণ্ড
ভারতীয় নাগরিকরা পিপিএফ-এ যোগ দিতে পারেন। যে কোনো ভারতীয় বাসিন্দা এই নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্পটির মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় শুরু করতে পারেন। তবে, প্রত্যেক ব্যক্তি শুধুমাত্র একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ব্যতিক্রম হল নাবালকদের ক্ষেত্রে, যেখানে একজন অভিভাবক নাবালকের পক্ষে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
পিতামাতা বা আইনি অভিভাবকরা তাদের নাবালক সন্তানের পক্ষে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন, যাতে শিশুটি এই নিরাপদ ও কর-দক্ষ সঞ্চয় প্রকল্পের সুবিধা পায়। তবে, অভিভাবকের নিজস্ব পিপিএফ অ্যাকাউন্ট এবং নাবালকের অ্যাকাউন্টে বার্ষিক জমার মোট সীমা ১.৫ লক্ষ টাকার বেশি হতে পারবে না।
পিপিএফ-এর সুবিধা
পিপিএফ-এর প্রধান সুবিধা হল এর ট্রিপল কর ছাড় (EEE স্ট্যাটাস)। এটি ধারা ৮০সি-এর অধীনে জমার উপর কর ছাড়, ব্যালেন্সের উপর কর-মুক্ত সুদ এবং ম্যাচুরিটির লাভে কর-মুক্ত সুবিধা প্রদান করে। এই প্রকল্পের ১৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ড এবং সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত স্থিতিশীল রিটার্ন এটিকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য একটি চমৎকার বিকল্প করে তোলে।
এটি সরকার-সমর্থিত, কর-দক্ষ সঞ্চয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চান এমন ব্যক্তিদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। প্রতি ত্রৈমাসিকে সরকার ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের জন্য সুদের হার ঘোষণা করে।
কলকাতায় পিপিএফ-এর জনপ্রিয়তা
কলকাতার বাসিন্দারা পিপিএফ-কে একটি নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার পাশাপাশি কর সুবিধার সুযোগ নিচ্ছেন। এসবিআই-এর মতো ব্যাঙ্কগুলি তাদের গ্রাহকদের জন্য পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা এবং অনলাইন ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে রিটার্ন গণনার সহজ উপায় প্রদান করছে।
কীভাবে এসবিআই পিপিএফ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করবেন?
এসবিআই-এর পিপিএফ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা খুবই সহজ। আপনাকে শুধুমাত্র নিম্নলিখিত তথ্য প্রদান করতে হবে: বার্ষিক জমার পরিমাণ: উদাহরণস্বরূপ, ১,৫০,০০০ টাকা।
- মেয়াদ: ১৫ বছর।
- সুদের হার: বর্তমানে ৭.১% (অটো-ইনপুট হয়ে যায়)।
এই তথ্য প্রবেশ করানোর পর ক্যালকুলেটর আপনাকে ম্যাচুরিটি পরিমাণ, মোট জমা এবং প্রাপ্ত সুদ দেখিয়ে দেবে। উদাহরণস্বরূপ, ১৫ বছরে ১,৫০,০০০ টাকা বার্ষিক জমা দিলে মোট ৪০,৬৮,২০৯ টাকা পাবেন, যার মধ্যে সুদ ১৮,১৮,২০৯ টাকা।
সুদ গণনার বিশেষত্ব
পিপিএফ-এ সুদ প্রতি মাসে গণনা করা হয়, তবে বছরের শেষে ৩১ মার্চ-এ জমা হয়। সুদ গণনা করা হয় প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে মাসের শেষ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যালেন্সের উপর। তাই, সর্বোচ্চ সুদ পেতে প্রতি মাসের ৫ তারিখের আগে জমা করা উচিত। যদি আপনি বছরের শুরুতে (এপ্রিলের ৫ তারিখের আগে) পুরো ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করেন, তাহলে পুরো বছরের জন্য সুদ পাবেন।
কেন পিপিএফ বেছে নেবেন?
পিপিএফ শুধুমাত্র একটি সঞ্চয় প্রকল্প নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সুরক্ষার একটি হাতিয়ার। এর সরকারি গ্যারান্টি, কর সুবিধা এবং নিরাপদ রিটার্ন এটিকে অবসর পরিকল্পনা বা বড় আর্থিক লক্ষ্যের জন্য আদর্শ করে তোলে। এছাড়া, ঋণ এবং আংশিক উত্তোলনের সুবিধা জরুরি সময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
৫ এপ্রিল ২০২৫-এ, পিপিএফ-এর সুদের হার ৭.১%-এ স্থির থাকায় বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। এসবিআই-এর পিপিএফ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার রিটার্ন গণনা করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারেন। আপনি যদি নিরাপদ এবং কর-দক্ষ বিনিয়োগ খুঁজছেন, তবে পিপিএফ আপনার জন্য একটি চমৎকার পছন্দ।