ভারত সরকার চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫) জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর সুদের হার অপরিবর্তিত (PPF Interest Rate) রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন ২০২৫) মতোই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে সুদের হার বহাল থাকবে।
ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ), সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, তিন বছরের টার্ম ডিপোজিট স্কিম, পোস্ট অফিস সেভিংস ডিপোজিট, কিষাণ বিকাশ পত্র, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএসসি) এবং মাসিক আয় প্রকল্প।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, “২০২৫-২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১ জুলাই, ২০২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) এর জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার পূর্বের মতোই থাকবে, যা প্রথম ত্রৈমাসিকে নির্ধারিত হয়েছিল।”
পিপিএফ সুদের হার অপরিবর্তিত ৭.১ শতাংশ
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ-এর জন্য সুদের হার জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫ ত্রৈমাসিকেও ৭.১ শতাংশে স্থির থাকবে। পিপিএফ একটি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় প্রকল্প, যা সরকারের তরফ থেকে পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষিত আয় ও ট্যাক্স বেনিফিট প্রদান করা।
পিপিএফ-এ বার্ষিক সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। মাসিক হিসেবে সর্বোচ্চ ১২,৫০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখা যায়। যেহেতু সুদের হার ৭.১ শতাংশ এবং তা বাৎসরিকভাবে কম্পাউন্ড করা হয়, তাই দীর্ঘমেয়াদে একটি বড় কোরপাস তৈরি করা সম্ভব।
১৫ বছরে কত কোরপাস তৈরি হবে?
পিপিএফ-এর বর্তমান সুদের হারে, অর্থাৎ ৭.১ শতাংশে, যদি কেউ প্রতি বছর ১.৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে, তবে ১৫ বছর পর তার মোট সঞ্চয় হবে আনুমানিক ৪০.৬ লক্ষ টাকা। এই হিসাবটি বাৎসরিক কম্পাউন্ডিং পদ্ধতিতে করা হয়েছে।
পিপিএফের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর কর ছাড়ের বৈশিষ্ট্য। এটি EEE (Exempt-Exempt-Exempt) শ্রেণির মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ, প্রাথমিক বিনিয়োগের উপর, সুদের উপর এবং মেয়াদ পূর্তির সময় প্রাপ্ত অর্থের উপর কোনও কর দিতে হয় না। ফলে সঞ্চয়কারীরা পুরো টাকাটাই হাতে পান।এই প্রকল্পে মূল টাকা ও সুদ উভয়ই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। ফলে রিটার্নের নিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনও দুশ্চিন্তা থাকে না।
পিপিএফ বিনিয়োগের বাড়তি সুবিধা
পিপিএফ-এর মাধ্যমে শুধু কর ছাড়ই নয়, বরং পেনশন বা অবসরের পর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প। ব্যাংকের এফডি বা অন্যান্য ডিপোজিটের তুলনায় পিপিএফ-এর সুদের হার তুলনামূলক বেশি এবং এখানে বাজারের ওঠাপড়ার কোনও প্রভাব থাকে না।
অন্যদিকে, পিপিএফ-এ একাধিক সুবিধা রয়েছে—উদাহরণস্বরূপ, ৭ বছর পরে লোনের সুবিধা, আংশিক টাকা তোলার সুযোগ এবং প্রয়োজনে মেয়াদ বাড়ানোর সুবিধা।
ভবিষ্যতের জন্য পিপিএফের ভূমিকা
বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে বাজারের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে পিপিএফ একটি স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগের পথ। যারা ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে যেতে চান না, তাদের জন্য এটি একটি নিরাপদ বিকল্প।
অর্থ বিশেষজ্ঞদের মতে, অবসরকালীন জীবনযাত্রার জন্য একটি বড় কোরপাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পিপিএফ একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। বিশেষ করে, যারা ধাপে ধাপে সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য এটি সহজ পদ্ধতিতে দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ের সুযোগ দেয়।
সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার পিপিএফসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হার অপরিবর্তিত রাখায় সঞ্চয়কারীদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। যারা ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত এবং সুরক্ষিত আয়ের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য পিপিএফ এখনো অন্যতম সেরা বিকল্প।
মোট কথা, মাসে ১২,৫০০ টাকা করে বিনিয়োগ করে ১৫ বছরে ₹৪০.৬ লক্ষের বেশি কোরপাস তৈরি করা মোটেও অবাস্তব নয়। এর সাথে থাকছে কর ছাড় ও নিরাপত্তা। তাই, নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য আজ থেকেই পিপিএফ-এ বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে।