ভারতের বিদ্যুৎ খাত দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল গ্রিড, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যাপক সংযোজন, বিকেন্দ্রীভূত বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ভোক্তাকেন্দ্রিক সংস্কার—সব মিলিয়ে এই খাতের কার্যপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে মূলত প্রযুক্তিনির্ভর রূপান্তরের মাধ্যমে। এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ মন্ত্রক (Ministry of Power) সম্প্রতি স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং সার্ভে চালু করেছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন ইন্ডিয়া এনার্জি স্ট্যাক (India Energy Stack – IES) নির্মাণে বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীদারদের সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, IES হবে একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড, মডুলার ও ওপেন-সোর্স ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার। যেমন আধার (Aadhaar) বা ইউপিআই (UPI) দেশের ডিজিটাল পরিচয় ও পেমেন্ট ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছে, তেমনি IES বিদ্যুৎ খাতকে প্রযুক্তিভিত্তিক স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকাঠামোয় রূপান্তর করবে।
Also Read | মার্কিন ৫০% শুল্কে ধাক্কা, রপ্তানিতে বাঁচতে প্রণোদনার দাবি বস্ত্রশিল্পের
এই প্ল্যাটফর্মে থাকবে—
সম্পদ, গ্রাহক ও লেনদেনের জন্য একক ডিজিটাল আইডি, ওপেন এপিআই (API)-এর মাধ্যমে আন্তঃসংযোগের সুযোগ, বিদ্যমান পুরনো (legacy) সিস্টেমের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমন্বয় এবং প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে আর্কিটেকচার, যা সহজেই যে কোনো বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা (DISCOM), স্টেট লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার (SLDC) বা অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস প্রোভাইডার (AMISP)-এর জন্য ব্যবহারযোগ্য হবে।
ফলে, বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে স্টার্টআপ, ভার্চুয়াল পাওয়ার প্ল্যান্ট (VPP), এমনকি এনার্জি ফিনটেক সংস্থাগুলিও এই সাধারণ ডিজিটাল ভিত্তির ওপর নিজেদের উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে পারবে।
এই রূপান্তরকে কার্যকর করতে মন্ত্রক একটি ইউটিলিটি ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছে। এখানে থাকবে ওপেন এপিআই ও প্রোটোকলভিত্তিক মানদণ্ড, যা বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তি (IT) ও অপারেশনাল টেকনোলজি (OT) প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ডেটা বিনিময়কে সহজ করবে। এর ফলে তৈরি হবে একটি সমন্বিত ডেটা ইকোসিস্টেম, যা ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে করবে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ।
মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সার্ভের মূল লক্ষ্য—
অংশীদারদের প্রোফাইল সংগ্রহ, সংস্থাগুলি কোন ধরনের সমাধান বা সেবা দিচ্ছে তা নথিভুক্ত করা, কোন কোন ক্ষেত্রে তারা উদ্ভাবনী কাজ করছে তা চিহ্নিত করা, IES-এ যোগদানের জন্য তাদের প্রস্তুতি মূল্যায়ন করা।
কারণ IES নির্দিষ্ট মান, প্রোটোকল ও আন্তঃসংযোগ কাঠামো (interoperability framework) নির্ধারণ করবে। ফলে স্টেকহোল্ডারদের এখন থেকেই নতুন পণ্য বা সমাধান তৈরি করার সময় এই মানদণ্ডগুলো মাথায় রাখতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মন্ত্রক অনুরোধ করেছে, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা যেন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সার্ভে সম্পন্ন করেন। অংশগ্রহণকারীরা সঠিক তথ্য জমা দিতে পারবেন এই লিঙ্কে: https://forms.office.com/r/Wm0sewTTrC অথবা বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে।
এই সার্ভে থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা এবং সমাধান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে এবং IES ইকোসিস্টেম গঠনে দিকনির্দেশ দেবে।
IES চালু হলে বিদ্যুৎ খাতে আসতে পারে কয়েকটি বড় পরিবর্তন—
1. স্বচ্ছতা বৃদ্ধি – লেনদেন থেকে শুরু করে গ্রাহক পর্যায়ের তথ্য, সবকিছু একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সহজে ট্র্যাক করা যাবে।
2. দক্ষতা বৃদ্ধি – গ্রিড ম্যানেজমেন্ট ও বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও স্মার্ট হবে।
3. উদ্ভাবনের সুযোগ – নতুন স্টার্টআপ ও এনার্জি টেক কোম্পানি সহজেই ওপেন এপিআই-এর মাধ্যমে নতুন সমাধান তৈরি করতে পারবে।
4. খরচ সাশ্রয় – প্লাগ-অ্যান্ড-প্লে মডেল ব্যবহারে সংস্থাগুলি জটিল প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দ্রুত সিস্টেম গ্রহণ করতে পারবে।
5. ভোক্তা ক্ষমতায়ন – গ্রাহকরা নিজের ব্যবহার ও বিলিং সংক্রান্ত পরিষ্কার ধারণা পাবেন, যা তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াবে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রক স্পষ্ট করেছে, IES কেবল একটি প্রযুক্তিগত প্রকল্প নয়; বরং এটি হবে বিদ্যুৎ খাতের জন্য একটি জাতীয় ডিজিটাল পরিকাঠামো। এর লক্ষ্য বিদ্যুতের উৎপাদন, সরবরাহ, ব্যবহার ও আর্থিক লেনদেনকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে আরও সমন্বিত, আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা।
দেশে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন দ্রুত বাড়ছে, তেমনি গ্রাহকের চাহিদা ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জও বহুগুণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, একটি একক ও উন্মুক্ত ডিজিটাল কাঠামো না থাকলে বিদ্যুৎ খাতের সঠিক সমন্বয় সম্ভব নয়। IES সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।