পোস্ট অফিস স্কিমে প্রতি মাসে আয় হতে পারে ২০,৫০০ টাকা

অবসর গ্রহণের পর নিশ্চিত এবং নিয়মিত আয়ের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা খুঁজছেন এমন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (Senior Citizen Savings Scheme)…

Senior Citizen Savings Scheme

অবসর গ্রহণের পর নিশ্চিত এবং নিয়মিত আয়ের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা খুঁজছেন এমন প্রবীণ নাগরিকদের জন্য পোস্ট অফিসের সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (Senior Citizen Savings Scheme) একটি আদর্শ বিকল্প হতে পারে। এই সঞ্চয় প্রকল্পের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে ২০,৫০০ টাকার পেনশন পেতে পারেন। এই প্রকল্পটি বিশেষভাবে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে অবসরের পরও তাদের আর্থিক চিন্তা না করতে হয়। সরকার-নিয়ন্ত্রিত এই প্রকল্পটি স্থিতিশীল এবং নির্দিষ্ট রিটার্ন প্রদান করে, যা এটিকে বাজারের ঝুঁকি ছাড়াই নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস করে তোলে।

যে সমস্ত প্রবীণ নাগরিক অবসরের পর প্রতি মাসে নিশ্চিত আয় চান এবং বাজার-সম্পর্কিত কোনও ঝুঁকি নিতে না চান, তাদের জন্য এসসিএসএস একটি উৎকৃষ্ট পছন্দ। এই প্রকল্পে একজন ব্যক্তি সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন এবং বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা সুদ হিসেবে আয় করতে পারেন। এই সুদের পরিমাণ থেকে প্রতি তিন মাসে ৬১,৫০০ টাকা এবং মাসে গড়ে ২০,৫০০ টাকা সরাসরি জমাকারীর অ্যাকাউন্টে জমা হবে। বর্তমানে, সরকার এই প্রকল্পের সুদের হার ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ সুদের হারগুলির একটি।

প্রকল্পের বিবরণ ও পরিবর্তন

প্রাথমিকভাবে এসসিএসএস-এ বিনিয়োগের সীমা ছিল ১৫ লক্ষ টাকা। পরবর্তীতে সরকার এই সীমা বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ টাকা করেছে, যাতে প্রবীণ নাগরিকরা আরও বেশি আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ এককালীন করতে হয় এবং সুদ প্রতি ত্রৈমাসিকে জমাকারীর অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এটি একটি সম্পূর্ণ সরকারি প্রকল্প হওয়ায় এতে বিনিয়োগের কোনও ঝুঁকি নেই, এবং এটি প্রবীণদের জন্য একটি নিরাপদ আর্থিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।

যোগ্যতা ও শর্তাবলী

এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য একজন ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং তিনি অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবেন। যারা ৫৫ বছর বয়সে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ (ভিআরএস) বা সুপারঅ্যানুয়েশনের নিয়মে অবসর নিয়েছেন, তারাও এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন। এছাড়াও, অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা কর্মীরা নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে এই স্কিমে বিনিয়োগের জন্য যোগ্য। তবে, এই প্রকল্পে যোগদানের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব বাধ্যতামূলক।

এসসিএসএস-এ জমা করা অর্থ পাঁচ বছরের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। জমাকারী চাইলে এই মেয়াদ শেষে আরও তিন বছরের জন্য অ্যাকাউন্টটি বাড়াতে পারেন। জরুরি প্রয়োজনে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে অ্যাকাউন্টটি অকালে বন্ধ করার সুযোগও রয়েছে। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যায় এমন সর্বোচ্চ পরিমাণ ৩০ লক্ষ টাকা, যা একক বা যৌথ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা যেতে পারে। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে প্রথম জমাকারীকে প্রবীণ নাগরিক হতে হবে।

Advertisements

কর সুবিধা

এসসিএসএস-এ বিনিয়োগ আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে কর ছাড়ের জন্য যোগ্য। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা পরিমাণের উপর বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়। তবে, সুদের পরিমাণের উপর কর প্রযোজ্য হতে পারে, যদি এটি বার্ষিক করযোগ্য আয়ের সীমা অতিক্রম করে। এই কর সুবিধা প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই প্রকল্পকে আরও লাভজনক করে তোলে।

কেন এই প্রকল্প জনপ্রিয়?

এই প্রকল্পটি প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম কারণ হল এর উচ্চ সুদের হার এবং নিরাপত্তা। বর্তমানে ৮.২ শতাংশ সুদের হার অন্যান্য সরকারি সঞ্চয় প্রকল্প যেমন পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট বা ব্যাঙ্ক এফডি-এর তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করলে বছরে ২.৪৬ লক্ষ টাকা সুদ পাওয়া যায়, যা প্রতি মাসে গড়ে ২০,৫০০ টাকার নিশ্চিত আয় নিশ্চিত করে। এছাড়াও, সরকারি সমর্থন থাকায় এতে বিনিয়োগের কোনও ঝুঁকি নেই, যা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে।

প্রবীণ নাগরিকরা এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে। প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে বয়সের প্রমাণপত্র, পরিচয়পত্র এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ। এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করে প্রবীণরা তাদের অবসর জীবনকে আরও সুরক্ষিত এবং আরামদায়ক করে তুলতে পারেন।