ভারত সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা (PMJJBY) সাধারণ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের জীবনবিমা প্রকল্প। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণকে কম প্রিমিয়ামের বিনিময়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা। কোনো ব্যক্তির অকাল মৃত্যুর পর তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করাই এই যোজনার অন্যতম লক্ষ্য।
এই বিমা প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা মৃত্যুর পর ২ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। এর জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম মাত্র ৪৩৬ টাকা, যা অন্যান্য বেসরকারি বিমা সংস্থার তুলনায় অনেক কম।
যোগ্যতা (Eligibility):
যে কোনো ভারতীয় নাগরিক এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন যদি তার বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর এর মধ্যে হয় এবং তার একটি ব্যাংক বা ডাকঘর অ্যাকাউন্ট থাকে। এই বিমার সর্বাধিক মেয়াদ ৫৫ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, ৫৫ বছর বয়সের পর এই বিমা কার্যকর থাকে না।
প্রিমিয়াম ও কভারেজ:
এই প্রকল্পের প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়েছে বার্ষিক ৪৩৬ টাকা। বিমা কভারেজ হিসেবে অংশগ্রহণকারীর মৃত্যুর পর তার পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এই কভারেজ যেকোনো ধরনের মৃত্যুর জন্য প্রযোজ্য। বিমার সময়কাল প্রতি বছর ১ জুন থেকে ৩১ মে পর্যন্ত।
বছর শেষে বিমা নবীকরণ করতে গেলে প্রতি বছর ৩১ মে’র মধ্যে ব্যাংকে ‘অটো-ডেবিট’ অপশন সক্রিয় রাখতে হবে। এতে প্রিমিয়াম সরাসরি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে, ফলে আলাদা করে অর্থ পরিশোধের ঝামেলা নেই।
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া:
প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনার জন্য অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব। এর জন্য ব্যাংকের নেট ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে খুব সহজে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হলো —
প্রথম ধাপ: নেট ব্যাংকিংয়ে লগইন করুন।
দ্বিতীয় ধাপ: ‘ইনস্যুরেন্স’ ট্যাবে ক্লিক করুন।
তৃতীয় ধাপ: ‘Social Security Plans’ নির্বাচন করুন।
চতুর্থ ধাপ: Pradhan Mantri Jeevan Jyoti Bima Yojana সিলেক্ট করুন।
পঞ্চম ধাপ: যে অ্যাকাউন্ট থেকে প্রিমিয়াম কেটে নেওয়া হবে, সেটি বেছে নিন।
একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হলে প্রতি বছর ৪৩৬ টাকা প্রিমিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে। ফলে বিমা নবীকরণে কোনো প্রকার ঝামেলা থাকবে না।
দাবি (Claim) প্রক্রিয়া:
বিমার টাকা পাওয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হয়। যদি বিমাপ্রাপক জীবিত অবস্থায় অক্ষমতা দাবি করেন, তাহলে তিনি নিজেই ফর্ম পূরণ করেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিমাপ্রাপকের মনোনীত ব্যক্তি (nominee) ফর্ম পূরণ করে।
দাবির জন্য যা যা প্রয়োজন:
প্রমাণপত্র (Aadhaar, PAN, পরিচয়পত্র)
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
বিমা দাবির ফর্মে সঠিক স্বাক্ষর
মৃত্যু সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)
দাবি সঠিকভাবে দাখিল হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ প্রদান করা হয়।
কোন কোন ব্যাংক এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে?
ভারতের প্রায় সব বড় ব্যাংক এই প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে।
পাবলিক সেক্টর ব্যাংকসমূহ:
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB)
স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI)
সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া
প্রাইভেট সেক্টর ব্যাংকসমূহ:
এইচডিএফসি ব্যাংক
কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক
করুর বৈশ্য ব্যাংক
আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকসমূহ (RRBs):
অন্ধ্র প্রগতি গ্রামীণ ব্যাংক
অসম গ্রামীণ বিকাশ ব্যাংক
কর্ণাটক বিকাশ গ্রামীণ ব্যাংক
এছাড়া বিভিন্ন রাজ্যের কো-অপারেটিভ ব্যাংক ও পোস্ট অফিস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও এই বিমা নেওয়া সম্ভব।
কেন এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের বিশাল জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনও বিমা সুরক্ষার বাইরে। অনেকেই উচ্চ প্রিমিয়ামের কারণে বেসরকারি বিমা নিতে পারেন না। তাদের জন্য এই প্রকল্প এক বড় সুযোগ। অল্প টাকায় পরিবারকে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।
এছাড়া সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রকল্পে কোনো জটিলতা নেই, দাবি প্রক্রিয়াও সহজ। এর ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষরাও সহজে বিমা সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন।
প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা সাধারণ মানুষের জন্য এক সহজ এবং সাশ্রয়ী জীবনবিমা পরিকল্পনা। মাত্র ৪৩৬ টাকায় ২ লাখ টাকার কভারেজ, সহজ আবেদন ও অটো-ডেবিট সুবিধা — সব মিলিয়ে এই প্রকল্প ভারতের আর্থিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। সরকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে জীবনবিমার সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।