HomeBusiness২০৩০ পর্যন্ত বাড়ল পিএম স্বনিধি প্রকল্প, ঋণের সীমা বেড়েছে

২০৩০ পর্যন্ত বাড়ল পিএম স্বনিধি প্রকল্প, ঋণের সীমা বেড়েছে

- Advertisement -

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার প্রধানমন্ত্রী স্বনির্ভর নিধি (PM SVANidhi ) প্রকল্পের পুনর্গঠন ও মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল। এই প্রকল্প এখন কার্যকর থাকবে ৩১ মার্চ, ২০৩০ পর্যন্ত। এর ফলে দেশের অসংগঠিত খাতের অন্যতম বড় অংশীদার, পথের দোকানদার ও ফেরিওয়ালাদের দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হবে।

সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট আর্থিক বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭,৩৩২ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে প্রায় ১.১৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন, যার মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ নতুন সুবিধাভোগী যুক্ত হবেন।

   

২০২০ সালের ১ জুন কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রথমবার চালু হয়েছিল পিএম স্বনিধি প্রকল্প। মহামারির ধাক্কায় তখন লক্ষ লক্ষ পথের দোকানদার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কার্যত কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময়ই সহজ ঋণের মাধ্যমে তাদের পুনরায় ব্যবসায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল — পথের দোকানদারদের নির্ভরযোগ্য আর্থিক সহায়তা, ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রণোদনা এবং ডিজিটাল লেনদেনের প্রতি উৎসাহ বৃদ্ধি।

সর্বশেষ পুনর্গঠনের ফলে প্রকল্পে একাধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে—
1. ঋণের সীমা বৃদ্ধি
প্রথম কিস্তির ঋণ: ১০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫,০০০ টাকা।
দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ: ২০,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫,০০০ টাকা।
তৃতীয় কিস্তির ঋণ: পূর্বের মতোই ৫০,০০০ টাকা।

2. UPI-সংযুক্ত রুপে ক্রেডিট কার্ড
যারা দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ সময়মতো পরিশোধ করবেন, তারা পাবেন একটি UPI-লিঙ্কড রুপে ক্রেডিট কার্ড।
এর মাধ্যমে জরুরি ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত খরচ মেটানো সহজ হবে।

3. ক্যাশব্যাক সুবিধা
খুচরা ও পাইকারি লেনদেনে ডিজিটাল মাধ্যমে লেনদেন করলে সর্বোচ্চ ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা।

4. দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ
উদ্যোক্তা সুলভ দক্ষতা, আর্থিক সাক্ষরতা, ডিজিটাল স্কিল ও বিপণন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পথের খাবারের দোকানদারদের জন্য FSSAI-এর সহায়তায় খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ থাকবে।
প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক (MoHUA) এবং আর্থিক পরিষেবা দপ্তর (DFS)। এর মধ্যে DFS-এর দায়িত্ব হবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের সম্প্রসারণ কেবলমাত্র ঋণ সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর লক্ষ্য হচ্ছে—
পথের দোকানদারদের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

পরিবারের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি।
শহুরে অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করা, যাতে রাস্তার বাজারগুলো টেকসই ইকোসিস্টেমে পরিণত হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতের শহুরে কর্মসংস্থানের বড় অংশই আসে অসংগঠিত খাত থেকে। পথের দোকানদাররা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রি করেন না, বরং শহরের অর্থনীতিকে চালিত করেন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস সুলভে পৌঁছে দেন। এই প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদে তাদের ব্যবসাকে আরও স্থিতিশীল করবে।

পিএম স্বনিধি প্রকল্প চালুর পর থেকেই এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান। বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মহামারির পর ঋণ সুবিধার মাধ্যমে আবার ব্যবসায় ফিরেছেন। ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বেড়েছে, যার ফলে নগদবিহীন অর্থনীতি গড়ে উঠছে। এবার ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ক্রেডিট কার্ড সুবিধার ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণ আরও সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকার বিশ্বাস করে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। ছোট ব্যবসা বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, নগর অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং এক অর্থে শহুরে জীবনের সামাজিক রূপ আরও উন্নত হবে।

কোভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে পথের দোকানদারদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যে প্রকল্পটি চালু হয়েছিল, তা এখন দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে সহায়ক হচ্ছে। ২০৩০ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার প্রমাণ করেছে যে, দেশের অসংগঠিত খাতের উন্নয়ন তাদের কাছে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

৭,৩৩২ কোটি টাকার এই উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, বরং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং টেকসই শহুরে উন্নয়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular