দেশের যুবসমাজকে কর্মদক্ষ ও আত্মনির্ভর করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার একগুচ্ছ উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন। মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬২,০০০ কোটি টাকারও বেশি। স্কিল ডেভেলপমেন্ট, আধুনিক শিক্ষা ও যুব ক্ষমতায়নে এই উদ্যোগকে ঐতিহাসিক বলেই মনে করা হচ্ছে।
আইটিআই ব্যবস্থার রূপান্তরে ৬০,০০০ কোটি টাকার PM-SETU প্রকল্প:
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্কিলিং অ্যান্ড এমপ্লয়েবিলিটি ট্রান্সফরমেশন থ্রু আপগ্রেডেড আইটিআই (PM-SETU)’ প্রকল্পের। এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মোট বিনিয়োগ ৬০,০০০ কোটি টাকা। সারা দেশের ১,০০০টি সরকারি আইটিআই আধুনিকীকরণ করা হবে ‘হাব অ্যান্ড স্পোক’ মডেলে—যেখানে থাকবে ২০০টি হাব আইটিআই ও ৮০০টি স্পোক আইটিআই।
প্রতিটি হাব গড়ে চারটি স্পোকের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। উন্নত অবকাঠামো, আধুনিক ট্রেড, ডিজিটাল লার্নিং ও ইনকিউবেশন সুবিধা থাকবে এই কেন্দ্রগুলিতে। পরিচালনার দায়িত্ব নেবে ‘অ্যাঙ্কর ইন্ডাস্ট্রি পার্টনার্স’, যাতে প্রশিক্ষণ বাজারের চাহিদার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। প্রথম পর্যায়ে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বিহারের পাটনা ও দারভাঙ্গার আইটিআইগুলিতে।
১,২০০টি ভোকেশনাল স্কিল ল্যাব চালু — গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য বড় সুযোগ: PM SETU Scheme ITI
স্কিল ডেভেলপমেন্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন ১,২০০টি ভোকেশনাল স্কিল ল্যাব, যা ৪০০টি নবোদয় বিদ্যালয় ও ২০০টি একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্প দেশের ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কার্যকর হবে।
১২টি উচ্চ চাহিদার সেক্টর—যেমন আইটি, অটোমোটিভ, কৃষি, ইলেকট্রনিক্স, লজিস্টিক্স ও পর্যটন—এ হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবে এই ল্যাবগুলো। পাশাপাশি ১,২০০ জন ভোকেশনাল শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কর্মদক্ষতার ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে।
বিহারের যুবদের জন্য ভাতা ও সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণ:
বিহার নির্বাচনের আগে রাজ্যে বড়সড় যুবমুখী প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয় স্বয়ং সহায়তা ভাতা যোজনা’-এর নবীকৃত সংস্করণে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লক্ষ স্নাতক যুবক-যুবতী দুই বছর ধরে মাসিক ১,০০০ টাকা ভাতা ও বিনামূল্যে দক্ষতা প্রশিক্ষণ পাবেন।
পাশাপাশি বিহার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিম-এর নতুন সংস্করণে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণের সুযোগ থাকছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩.৯২ লক্ষ শিক্ষার্থী এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৭,৮৮০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পেয়েছেন।
যুব কমিশন ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় — দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নতুন দিশা:
তরুণ প্রজন্মের শক্তিকে সংগঠিত ও গঠনমূলক কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন বিহার যুব কমিশন-এর। একই সঙ্গে তিনি উদ্বোধন করেন জননায়ক কার্পূরি ঠাকুর স্কিল ইউনিভার্সিটি, যেখানে শিল্পমুখী কোর্সের মাধ্যমে গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় সক্ষম মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে কাজ হবে।
উচ্চশিক্ষায় নতুন বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়, নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটি, মধেপুরার ভূপেন্দ্র নারায়ণ মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাপরার জয়প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ও গবেষণা পরিকাঠামোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই প্রকল্পগুলিতে মোট ১৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং ২৭,০০০-রও বেশি শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন।
এনআইটি পাটনার বিহটা ক্যাম্পাস উৎসর্গ ও নিয়োগপত্র বিতরণ:
প্রধানমন্ত্রী এনআইটি পাটনার বিহটা ক্যাম্পাস জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। ৬,৫০০ শিক্ষার্থীর আসনসংখ্যা বিশিষ্ট এই ক্যাম্পাসে ৫জি ল্যাব, আইএসআরও সহযোগিতায় রিজিওনাল অ্যাকাডেমিক সেন্টার ফর স্পেস এবং ইনোভেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।
শেষে, তিনি বিহার সরকারের ৪,০০০-রও বেশি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। একই সঙ্গে ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ২৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকার বৃত্তি সরাসরি হস্তান্তর করেন।
এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের লক্ষ্য, যুবসমাজকে দক্ষ করে তোলা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো এবং আধুনিক শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করে আত্মনির্ভর ভারত গঠনের পথকে আরও শক্তিশালী করা।