ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Modi ) বৃহস্পতিবার থেকে জাপান ও চিনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর শুরু করেছেন। ২৯ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত তিনি জাপান সফরে থাকবেন, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে ১৫তম ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ বৈঠক। এরপর ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর তিনি চিনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে যোগ দেবেন। এই সফরের মাধ্যমে ভারত-জাপান সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার আমন্ত্রণে টোকিও পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষ কৌশলগত ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের (Special Strategic and Global Partnership) পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ হবে। মোদী জানিয়েছেন, গত ১১ বছরে ভারত-জাপান সম্পর্ক ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি লাভ করেছে, আর এবার সেই বন্ধনকে আরও বিস্তৃত ও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়াই তাঁর সফরের মূল উদ্দেশ্য।
দুই প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবেন। বিশেষত উদীয়মান প্রযুক্তি খাতে—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য হাই-টেক ক্ষেত্রে—একসাথে কাজ করার রূপরেখা তৈরি হবে।
মোদী বলেছেন, “আমরা আমাদের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়কে ‘ডানা’ দিতে চাই। শুধু অর্থনীতি নয়, নতুন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার দিকগুলোতেও অগ্রগতি হবে।”
অর্থনীতি ও প্রযুক্তির বাইরেও দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সভ্যতাগত সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগ রয়েছে। মোদী জানিয়েছেন, তাঁর সফর হবে এই সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ। ভারত ও জাপানের জনগণের মধ্যে যে ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে, তা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে।
জাপানে বসবাসরত ভারতীয়রা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তারা বিশ্বাস করছেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। টোকিওতে এক প্রবাসী ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেছেন, “একজন ভারতীয় হিসেবে আমি গর্বিত। মোদীজির আগমন আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।”
জাপান সফর শেষ করেই ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী মোদী চিনের তিয়ানজিনে যাবেন। সেখানে তিনি অংশ নেবেন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনে। এই সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোদী জানিয়েছেন, ভারত SCO-এর সক্রিয় ও গঠনমূলক সদস্য। ভারতের সভাপতিত্বকালে সংস্থাটিতে স্বাস্থ্য, উদ্ভাবন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মতো ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, এই সম্মেলনে যৌথ সহযোগিতা আরও গভীর হবে এবং আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
নিজের সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, “ভারত সবসময় আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাপান ও চিন সফর আমাদের জাতীয় স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।”
তিনি আরও জানান, SCO সম্মেলনে ভারত তার প্রতিবেশী ও অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে সন্ত্রাস দমন, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসাথে কাজ করবে।
মোদীর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে জাপানের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তির নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। অন্যদিকে SCO-তে চিন ও রাশিয়ার মতো বড় শক্তির সঙ্গে ভারতের উপস্থিতি আঞ্চলিক ভারসাম্য ও কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একইসঙ্গে SCO মঞ্চে ভারতের সক্রিয় অংশগ্রহণ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জাপান ও চিন সফরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে প্রত্যাশা বেড়েছে। জাপানের সঙ্গে বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এবং SCO-তে বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে জোরদার করাই হবে এই সফরের মূল সাফল্য।
মোদী নিজেও আত্মবিশ্বাসী যে, এই সফর ভারতের জাতীয় স্বার্থকে সুসংহত করবে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নের পথে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।