জুন পেরিয়ে গেলেও আসেনি পিএম কিষাণের কিস্তি, কী বলছে কেন্দ্র? জানুন বিস্তারিত

দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক অপেক্ষায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM-KISAN) স্কিমের ২০তম কিস্তির জন্য। কিন্তু জুন মাস প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে…

PM Kisan Samman Nidhi Scheme

দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষক অপেক্ষায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি (PM-KISAN) স্কিমের ২০তম কিস্তির জন্য। কিন্তু জুন মাস প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে কৃষকদের মধ্যে একপ্রকার উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর এই সময়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জুন মাসে ১৭তম কিস্তি হস্তান্তর করেছিলেন। তাই অনেকেই আশা করেছিলেন যে এবছরও জুনেই কিস্তির টাকা আসবে। কিন্তু এবার কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন দেরি হচ্ছে কিস্তির টাকা আসতে?
PM-KISAN স্কিম অনুযায়ী বছরে তিনটি কিস্তিতে কৃষকদের ৬,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় — ফেব্রুয়ারি, জুন এবং অক্টোবর মাসে। এবছর ফেব্রুয়ারিতে ১৯তম কিস্তি জারি হয়েছিল। তাই জুনে ২০তম কিস্তি আসার কথা থাকলেও, তা এখনও পর্যন্ত আসেনি। সরকারিভাবে এই বিলম্বের কারণ জানানো না হলেও বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী কোনো এক অনুষ্ঠানে ২০তম কিস্তির অর্থ হস্তান্তর করবেন। তবে কবে এবং কোথায় এই অনুষ্ঠান হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

   

কিস্তি পেতে কৃষকদের কী কী করতে হবে?
যাতে কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রকম বাধা না আসে, তার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে:

১. আধারের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করান:
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আধারের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে টাকা জমা হবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাংকে গিয়ে আধার লিঙ্ক করিয়ে নিতে হবে।

২. ই-কে-ওয়াইসি (e-KYC) সম্পূর্ণ করুন:
সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বলা হয়েছে: “eKYC is MANDATORY for PMKISAN Registered Farmers.” অর্থাৎ যাঁরা ই-কে-ওয়াইসি করেননি, তাঁদের কিস্তির টাকা আটকে যেতে পারে।

ই-কে-ওয়াইসি করার তিনটি উপায়:
ওটিপি ভিত্তিক (OTP-Based): যদি আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যুক্ত থাকে, তাহলে https://pmkisan.gov.in-এ গিয়ে ওটিপি দিয়ে ভেরিফাই করে নিন।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে (Biometric): নিকটবর্তী CSC (Common Service Centre)-তে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে ই-কে-ওয়াইসি সম্পন্ন করুন।
মুখ চিনে ভেরিফিকেশন (Facial Authentication): বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অক্ষম কৃষকদের জন্য CSC-তে ফেস রেকগনিশনের মাধ্যমে ই-কে-ওয়াইসি করা যায়।

৩. জমির রেকর্ড যাচাই করুন:
আপনার জমির তথ্য যদি ভুল হয়, তাহলে আপনি অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারেন। তাই জমির কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে নিন এবং সংশোধনের প্রয়োজনে CSC বা কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করুন।

৪. আবেদনপত্রের অবস্থা অনলাইনে দেখে নিন:
https://pmkisan.gov.in-এ গিয়ে ‘Know Your Status’ অপশন থেকে নিজের রেজিস্ট্রেশন বা আধার নম্বর ব্যবহার করে চেক করুন আপনি উপভোক্তার তালিকায় রয়েছেন কিনা।
নামের বানানে ভুল? কীভাবে ঠিক করবেন?

Advertisements

অনলাইন পদ্ধতিতে:
https://pmkisan.gov.in-এ গিয়ে ‘Farmer Corner’-এ ক্লিক করে ‘Updation of Self Registered Farmer’-এ যান
আধার নম্বর ও ক্যাপচা দিয়ে লগইন করুন
আপনার নাম ঠিক যেভাবে আধারে আছে, সেভাবে টাইপ করে সাবমিট করুন

অফলাইন পদ্ধতিতে:
নিকটবর্তী CSC বা কৃষি অফিসে গিয়ে আধার, জমির কাগজ, ব্যাংক পাসবই ও পিএম-কিষাণ আইডি নিয়ে যান
সংশোধন করে দিন

পিএম-কিষাণ স্কিম কী?
২০১৯ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘোষিত এই প্রকল্পটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT) স্কিম। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বছরে ৬,০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় তিন কিস্তিতে — এপ্রিল-জুলাই, আগস্ট-নভেম্বর ও ডিসেম্বর-মার্চ।

কারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন?
নিম্নলিখিত ব্যক্তিরা এই স্কিমের উপভোক্তা হতে পারেন:

  • ভারতীয় নাগরিক হতে হবে
  • নিজের নামে চাষযোগ্য জমি থাকতে হবে
  • ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষক হতে হবে
  • যারা মাসে ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি পেনশন পান, তারা অযোগ্য
  • আয়করদাতা হলে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে না
  • কোনো প্রতিষ্ঠানিক ভূমি ধারক এই সুবিধা পাবেন না

কীভাবে আবেদন করবেন?
১. https://pmkisan.gov.in-এ যান
২. ‘New Farmer Registration’-এ ক্লিক করুন
৩. আধার নম্বর ও ক্যাপচা দিন
৪. ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করুন
৫. একটি প্রিন্টআউট রেখে দিন

সহায়তা নম্বর:
যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে এই নম্বরগুলিতে ফোন করতে পারেন:
155261
011-24300606
যদিও ২০তম কিস্তির তারিখ সরকারিভাবে ঘোষণা হয়নি, তবে সবদিক থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে জুলাই ২০২৫-এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই কিস্তির অর্থ হস্তান্তর করবেন। কৃষকদের অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তাঁরা সময়মতো ই-কে-ওয়াইসি সম্পন্ন করেন, ব্যাঙ্ক ও জমির কাগজ যাচাই করে নেন এবং অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের স্ট্যাটাস চেক করে নেন। তাহলে কিস্তি মিস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।