কলকাতা, ৭ অক্টোবর ২০২৫: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PM Awas Yojana – PMAY)-এর আওতায় পশ্চিমবঙ্গের অক্টোবর মাসের উপভোক্তাদের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই তালিকায় নাম উঠে এসেছে প্রায় ২.৩৫ লক্ষ পরিবারের। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্র পরিবার, যারা দীর্ঘদিন ধরে পাকা বাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
গ্রামীণ ও শহুরে প্রকল্পে উপভোক্তা
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে গ্রামীণ আবাস যোজনায় ১.৮০ লক্ষ পরিবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আর শহুরে আবাস যোজনায় প্রায় ৫৫ হাজার পরিবার নতুন করে অনুমোদন পেয়েছেন। গ্রামীণ পরিবারগুলো প্রতিটি বাড়ি তৈরির জন্য ১.৫৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পাবেন। শহুরে পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সহায়তা।
সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী কোন জেলায়?
👉 উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, মালদা, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মতো জেলাগুলিতে সর্বাধিক উপভোক্তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
👉 উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও উত্তর দিনাজপুরেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবার তালিকায় নাম পেয়েছে।
কিভাবে চেক করবেন নিজের নাম তালিকায়?
১. অনলাইনে: উপভোক্তারা pmaymis.gov.in বা awaassoft.nic.in –এ গিয়ে আধার বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে নিজের নাম খুঁজে নিতে পারবেন।
২. অফলাইনে: প্রতিটি ব্লক অফিস, পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতে তালিকা টাঙানো হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় গ্রাম রোজগার সহায়ক (GRS) ও শহরে পুরসভার কর্মীরাও এই বিষয়ে তথ্য দিচ্ছেন।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প?
পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিবার এখনও কাঁচা বা আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন। আবাস যোজনার মাধ্যমে শুধু একটি ছাদ নয়, তাঁদের জন্য তৈরি হচ্ছে নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই আবাসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করছে। কারণ প্রতিটি বাড়ি নির্মাণের কাজে স্থানীয় শ্রমিক, ইট, বালি, সিমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে।
Also Read | দেশের সামনে গগৈয়ের মুখোশ খুলবেন! দাবি হিমন্তর
রাজনৈতিক তরজা
তালিকা প্রকাশের পর রাজনীতিতে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, কেন্দ্রের বরাদ্দের পাশাপাশি রাজ্য সরকারও অতিরিক্ত সহায়তা দিচ্ছে। বিজেপি পাল্টা অভিযোগ এনেছে যে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করছে এবং উপভোক্তাদের কাছে কৃতিত্ব নিতে চাইছে।
রাজনৈতিক বিতর্কের মাঝেই সাধারণ মানুষ আশা করছেন, শীঘ্রই তাঁরা নিজেদের মাথার ওপর নতুন পাকা ছাদ দেখতে পাবেন।
উপভোক্তাদের অভিজ্ঞতা
মালদার এক গ্রামীণ উপভোক্তা বলেন, “বছরের পর বছর কাঁচা ঘরে থাকতাম। এখন মনে হচ্ছে সত্যি স্বপ্ন পূরণ হবে। সরকার যদি দ্রুত টাকা দেয়, শীত আসার আগেই নতুন বাড়ি তুলব।”
কলকাতার বেহালার এক শহুরে উপভোক্তা জানান, “ভাড়ার বাড়িতে থেকে জীবন কেটেছে। এখন মনে হচ্ছে নিজের নামে একটা বাড়ি হবে।”
সামনে কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়ন হলে পশ্চিমবঙ্গের আবাসন সংকট অনেকটাই কমবে। তবে জেলাভিত্তিক তদারকি বাড়ানো এবং দুর্নীতি এড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় থাকলে প্রকল্পটি আরও দ্রুত গতিতে এগোবে বলে তাঁদের মত।