কেন্দ্রের পিএলআই প্রকল্পে খাদ্য শিল্পে কর্মসংস্থানের নয়া দিগন্ত

ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ (ফুড প্রসেসিং) শিল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা স্কিম (PLI Scheme) উল্লেখযোগ্যভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। ইতিমধ্যেই এই স্কিমের মাধ্যমে ৭,০০০ কোটি টাকার…

PLI Scheme Boosts India's Food Processing

ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ (ফুড প্রসেসিং) শিল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা স্কিম (PLI Scheme) উল্লেখযোগ্যভাবে সাফল্য অর্জন করেছে। ইতিমধ্যেই এই স্কিমের মাধ্যমে ৭,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে এবং এর ফলে ২.৫ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব রণজিৎ সিংহ, ফিকি (FICCI) আয়োজিত ‘ফুডওয়ার্ল্ড ইন্ডিয়া’ ইভেন্টে বক্তৃতা প্রদানকালে।

রণজিৎ সিংহ আরও জানান, এই মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১,৬০০টি প্রকল্পকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, যার ফলে সারা দেশে ৪১ লক্ষ টন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা গড়ে উঠেছে। এই কর্মসূচিগুলির সুফল পাচ্ছেন দেশের প্রায় ৯ লক্ষ কৃষক।

   

কৃষিপণ্য থেকে অধিক মূল্য, কমছে অপচয়
সিং তার বক্তব্যে বলেন, “খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাত শুধুমাত্র কৃষিজ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি পোস্ট-হারভেস্ট ক্ষয়ক্ষতি কমাতে, কৃষি বহুমুখীকরণে সহায়তা করতে এবং রপ্তানির জন্য অতিরিক্ত উৎপাদন গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।” তিনি আরও বলেন, “ভারতের কৃষিখাতে যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা দেশের আত্মনির্ভরতা ও বৈশ্বিক খাদ্য ঝুড়ি হিসেবে ভারতের অবস্থানকে জোরদার করতে পারে, যদি সরকারের সঠিক নীতিগত সহায়তা পাওয়া যায়।”

তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এর মধ্যে প্যাকেজিং, সংরক্ষণ এবং পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আমরা যদি সত্যিকারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই, তাহলে প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, স্টোরেজ এবং পরিবহন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন অত্যাবশ্যক,”— বলেন তিনি।

অবকাঠামো ও উদ্যোগ বিকাশে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রক বর্তমানে একাধিক প্রকল্প পরিচালনা করছে যা এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘কিষাণ সম্পদা যোজনা’। এটি একটি ছাতার মত প্রকল্প, যার আওতায় কোল্ড চেইন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ক্লাস্টার, ফুড টেস্টিং ল্যাব এবং গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

Advertisements

আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো ‘প্রধানমন্ত্রী ফর্মালাইজেশন অফ মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজেস (PMFME)’। এই প্রকল্পটি ক্ষুদ্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করতে এবং তাদের উন্নয়নের পথ সুগম করতে তৈরি হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষ মাইক্রো এন্টারপ্রাইজকে ঋণ-সংযুক্ত ভর্তুকি এবং পরিকাঠামোগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

রণজিৎ সিংহ আরও জানান, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি বড়ো হয়ে মাঝারি আকারের ব্যবসায় পরিণত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটছে এবং উদ্যোক্তা গঠনের পথ সুগম হয়েছে।

রপ্তানি ও গ্রামীণ উন্নয়নের সম্ভাবনা
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নয়নের ফলে ভারত বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের স্থান আরও মজবুত করতে পারবে। পাশাপাশি এই শিল্প গ্রামীণ যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে এবং কৃষকদের আয় বাড়ানোর পথ তৈরি করছে। PLI স্কিম এবং অন্যান্য প্রকল্পগুলির মাধ্যমে তৈরি হওয়া অবকাঠামো আগামী দিনে রপ্তানি বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারতের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বর্তমানে এক রূপান্তর পর্বে রয়েছে। সরকারের লক্ষ্যভিত্তিক নীতি ও প্রণোদনা মূলক স্কিমগুলি—বিশেষ করে পিএলআই, কিষাণ সম্পদা ও পিএমএফএমই—এই খাতকে শক্তিশালী ভিত্তি দিয়েছে। এই কর্মসূচিগুলির সঠিক বাস্তবায়ন ভবিষ্যতে ভারতের কৃষি ও শিল্প খাতকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।